খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পার হয়েছে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা। গতকাল রাত পর্যন্ত ২৭ শিক্ষার্থী দাবি আদায়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে সোমবার বিকাল ৪টায় এক দফা দাবিতে ৩২ জন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। প্রথম দিনে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ ও মায়ের অসুস্থতার কারণে আরেকজন বাড়ি ফিরে যান। প্রচণ্ড গরমে গতকাল দুপুরে অনশনরত আরও দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের একজনকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ও অপরজনকে খুলনা সিটি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। গতকাল বিকালে অনশনস্থলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ তথ্য জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া ইউজিসি থেকে একটি প্রতিনিধিদল বুধবার সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় কুয়েটে আসছে। সেখানে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। একইভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিমুহূর্তে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যেখানে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে প্রতিনিধিদলের আসতে বিলম্বতা তাদের হতাশ করেছে। অপরদিকে ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর গতকালও একাধিকবার চেষ্টা করেছে। পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) ড. মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াছ গতকাল সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়েছেন। দুপুরের দিকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তারা অনশনস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপরও শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে অনড় রয়েছেন। অনশনরত সিই বিভাগের ২০ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এক দফা এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ। আমাদের দাবি যেদিন মেনে নেওয়া হবে, সেদিনই অনশন শেষ হবে।’ উল্লেখ্য রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ব্লকেড করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জবি) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। রাত ১১টার পর আরও কয়েক শ শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে অবরোধে যোগ দিয়েছেন। তাদের অবস্থানের ফলে বেশ কিছু সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ব্লকেড, শাহবাগ ব্লকেড, আমার ভাই অনশনে, ইন্টেরিম কী করে, শিক্ষা সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না’, ‘দালাল ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘কুয়েট ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েট উপাচার্যকে সরানোর বিষয়ে প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানানো হয়। প্রসঙ্গত, এ দিন কুয়েট উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য রাত ১০টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগ না করলে শাহবাগ ব্লকেডের ঘোষণা দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় তারা শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচিতে যোগ দেন।