প্রথমে বিশ্বাস অর্জন ও পরে ধাপে ধাপে প্রতারণা। এমনই এক চক্র তান্ত্রিক জৈনপুরী ও জিনের বাদশা। যার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত সাত বছরে কয়েক হাজার লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া সমাধান, অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করা কিংবা চাকরিতে প্রমোশনের মতো সমস্যা সমাধান করেন অভিজ্ঞ জৈনপুরী মা ফাতেমা। ইউটিউবে এমন অভিনব বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। বিভিন্ন সময় নারীর কণ্ঠে কথা বললেও এই চক্রের সবাই পুরুষ সদস্য। প্রতারণার কৌশল হিসেবে চটকদারি বিজ্ঞাপন বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার করে প্রতারণা করে আসছে চক্রটি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডে পিবিআই উত্তরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন মান্নান।
তিনি জানান, প্রবাসী স্বামী ১৭ বাংলাদেশির ভিসার জন্য সৌদির কফিলকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েও ভিসা ও টাকা ফেরত না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্ত্রী। স্বামীর এমন সমস্যা সমাধানে স্ত্রীর নজরে আসে জিনের বাদশা তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের সব সমস্যার সমাধানে চটকদার বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে জিনের বাদশা খ্যাত প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী ভুক্তভোগী রহিমা বেগম। শুরুতে কোনো টাকা লাগবে না বলে জানানো হয়। সৌদি কফিল তাদের টাকা বা ভিসা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে বাধ্য করার জন্য সৌদি কফিলের কাছে যেতে জিন-পরীকে পাক-পবিত্র করতে হবে বলে জানায় চক্রটি। বিভিন্ন অজুহাতে ধাপে ধাপে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন প্রবাসীর স্ত্রী রহিমা বেগম। এরপর রহিমার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে নামে পিবিআই। ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের তিন সদস্যকে। তারা হলেন- মো. রাকিব, মো. রাকিব মোল্লা, মো. আলাউদ্দিন। তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, লোভনীয় বিজ্ঞাপনের তিনটি ভিডিও, বিভিন্ন ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলার ১০টি ভয়েস রেকর্ড, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের সাতটি ছবি, ১৫০ পাতা বিকাশ স্টেটমেন্ট ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনের পাঁচটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়।