চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল থেকে ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পাসে তাদের এখনো সরব উপস্থিতি ঘটেনি। হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলেও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদসহ অন্যান্য অনুষদের অধিকাংশ বিভাগের ক্লাসগুলো ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা এখনো ভিতসন্ত্রস্ত এবং ওই ঘটনার ভয়াবহ ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অনাবাসিক শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেটসহ জোবড়া গ্রামে এতদিন বসবাস করে আসছিলেন তারা আবাসন সংকটের পাশাপাশি ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা সব থেকে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মধ্যে একাধিক নারী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের নানান মাধ্যমে ধর্ষণসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বল্প উপস্থিতির বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমীন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা কিছুটা ট্রমায় আছে। এত বড় একটি ঘটনা ঘটার পরে আমরা সকিং পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, আগামী রবিবার থেকে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সিরিয়াস উপস্থিতি বাড়বে। পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন বলেন, ৯টি বিভাগে পরীক্ষা চলছে। তবে আমরা বিভাগগুলোকে স্বাধীনতা দিয়েছি যে, তারা মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নিতেও পারেন, আবার বন্ধও রাখতে পারেন।
আহত শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং অপরজনকে গতকাল বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ভাস্কুলার ইনজুরি হওয়ায় চবি ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। গতকাল তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। জানা গেছে, চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের (২৪) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার চিকিৎসায় গতকাল পার্কভিউ হাসপাতালে দুজন নিউরো সার্জন, একজন নিউরো মেডিসিন, একজন মেডিসিন, একজন অর্থোপেডিক ও একজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের মতে, প্রথম সিটি স্ক্যানে মাথায় জমাট রক্ত দেখা গেছে। তাই আবারও সিটি স্ক্যান করা হবে। সেখানেও যদি রক্ত দেখা যায়, তাহলে অপারেশনের দরকার হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীর অভিভাবকের সম্মতি দরকার হবে। ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা থাকায় মাঝে-মধ্যে তার খিঁচুনি হচ্ছে। বর্তমানে তার জ্ঞানের লেভেল ৮-৯ এর মধ্যে আছে। অন্যদিকে, আবদুল্লাহ আলম মামুনকে (২৪) গতকাল আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। তার জ্ঞানের লেভেল ১৪।
সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর (জোবরা) মধ্যে টানা দুই দিনের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর রূপান। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, একটি টিম এখনো মাঠে কাজ করছে।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন : সংঘর্ষের পর অস্থির পরিস্থিতিতে একাধিক ছাত্র সংগঠন মাঠে নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে সাত দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। বর্তমানে ক্যাম্পাস ও জোবরায় যৌথ বাহিনীর টহল কার্যকর রয়েছে।
সিন্ডিকেট সভার প্রধান সিদ্ধান্ত : গত ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা ও ব্যয়ভার বহন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় মডেল থানা, রেলগেটে নিরাপত্তা চৌকি, শাটল ট্রেনে নিরাপত্তাব্যবস্থা, মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন ও ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের উদ্যোগ। ১০ তলাবিশিষ্ট পাঁচটি ছাত্র হল ও পাঁচটি ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুত, বিদ্যমান আবাসিক হল সংস্কার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রাখা, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন, স্থানীয় নিরীহ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি পূরণে সরকারি সহায়তা নিশ্চিতকরণ।