পোষ্য কোটা পুনর্বহাল প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ নির্ধারিত সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একপক্ষ আমরণ অনশনে বসেছেন। আরেক পক্ষ উপউপাচার্যকে অবরুদ্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। উত্তেজনার মধ্যেই শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার চেয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে এসব ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ বলেন, তোমরা বাইরের পরিস্থিতি শান্ত করো। তাহলে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা বহালের প্রজ্ঞাপন বাতিল ছাড়া কোনো আলোচনা নয়। রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রও রুখে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট দিনেই নির্বাচন দিতে হবে। এরআগে, শুক্রবার রাত থেকে শহীদ জোহা চত্বরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে কাফনের কাপড়ে আমরণ অনশনে বসেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আশাদুল ইসলাম। তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে যোগ দেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ অন্য শিক্ষার্থীরাও। শনিবার সকালে তাদের অনশন ভাঙাতে উপাচার্য, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টারা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দুপুরের পর তিনজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় উত্তেজিত হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপউপাচার্য ড. মাঈন উদ্দিন প্রশাসন ভবন থেকে বের হয়ে বাসভবনে ফেরার পথে আন্দোলনকারীরা তার গাড়ি আটকে দেন এবং পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানান। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাড়িতে যেতে চাইলে আন্দোলনকারীরা বাসভবনের গেটে তালা দেন। বাধ্য হয়ে তিনি জুবেরী ভবনে আশ্রয়ের চেষ্টা করলে সেখানেও বাধা দেন তারা। এ সময় উপউপাচার্য-শিক্ষক-প্রক্টরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতি হয়। ভবনের দোতলার একটি কক্ষে উপউপাচার্য, প্রক্টর, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে বাইরে আন্দোলন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরুদ্ধই আছেন তারা। গত রাত সাড়ে ৯টায় পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণার পর মেয়েরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে যান। পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে কয়েক হাজার ছাত্রী হল থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। রাত ১০টার পর থেকেই হলগুলো থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে জুবেরী ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিতে থাকেন। রাত সাড়ে ১১টার পর একযোগে কয়েক হাজার ছাত্রী হল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। আন্দোলনকারীরা দুটি দাবিতে সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ‘পোষ্য কোটা’র প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং ২৫ সেপ্টেম্বরেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেছেন। এদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে শাস্তির দাবি জানান শিক্ষকরা। লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা এবং দাবি আদায় না হলে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। কর্মবিরতির ঘোষণার পর কোটা বাতিলের আন্দোলন আরও তীব্র হয়। হলগুলো থেকে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীরাও অংশ নেন। আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে শিবির, ছাত্রদল, বামসহ সমমনা সংগঠনগুলো।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, কোনো অযৌক্তিক কোটা রাখা যাবে না। কোটা পুনর্বহাল প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।