আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস। সাঁইজির প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভাব প্রদান করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছেন বাউল, সাধক ও ভক্তরা। তিরোধান দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পাঁচ দিনের গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে রবিবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। আলোচনা সভার পর মুক্তমঞ্চে লালন শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই গান। লাখো মানুষের স্রোত এবার মিশেছে আখড়াবাড়িতে। এমন জনসমাগম গেল দুই দশকে কেউ দেখেনি বলে জানিয়েছেন বাউল, ভক্ত ও আয়োজকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে কমতে শুরু করেছে ভক্তরা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে লালনের গান। দলে দলে বিভক্ত বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করছেন তারা। মুক্তমঞ্চে চলছে গান। মঞ্চের সামনেই বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেখানে বেশ ভিড় এখনো। ‘পার করো হে দয়াল চাঁদ আমারে, ক্ষম হে অপরাধ আমার, এ ভব কারাগারে। পাপী অধম হে তোমার, যদি না করো পার দয়া প্রকাশ করে...’ সাঁইজির গানে বিদায় বেলায় এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করলেন বাউল করিম শাহ। তিনি বলেন, এখানে অষ্টপ্রহর ভক্তরা প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা ও ভাববিনিময় করে নিজ গন্তব্যে চলে যান। বিদায় খুব কঠিন ব্যাপার। তাই তো বিদায় বেলা খুব কষ্টের।’ এই মানুষে আছেরে মন, যাকে বলে মানুষ রতন’ সাঁইজির এমন বাণী জানিয়ে ফকির হৃদয় সাধু বলেন, ফকির লাইন সাঁইজির সত্যে সত্যতা হন। আজ সাঁইজির দর্শন ও সত্যতা সবকিছু মিলিয়ে আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল নেমে এসেছে, জোয়ার নেমেছে।