বেঁচে থাকার জন্য পানির প্রয়োজন। তাই পানির অপর নাম জীবন। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে পানি একটি। এর কোনো ক্যালরিমূল্য নেই। কিন্তু শরীর সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। জীবনধারণের জন্য যে সব রাসায়নিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া তা সবই পানির মাধ্যমেই হয়। মানবদেহের ৩ ভাগের ২ ভাগ পানি। প্রাপ্ত বয়স্কদের শরীরে রক্ত প্রবাহের মধ্যে প্রায় ৩ কেজি পানি সারাক্ষণ প্রবাহিত হচ্ছে। দেহকোষে পুষ্টি উপাদান বয়ে নেয় আর বিপাকের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য, বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ফুসফুস ও কিডনিতে নিয়ে গিয়ে তা নিষ্কাশনে সাহায্য করে। শরীর থেকে ১. শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ২. ত্বকের মাধ্যমে অর্থাৎ ঘাম হয়ে ও ৩. প্রস্রাব ও পায়খানার মাধ্যমে পানি বের হয়ে যায়। পানির অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন ব্যাহত হয়, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়ে থাকে।
এক সময় আমাদের দেশে এমনকি সমগ্র পৃথিবীতে পানি ছিল একমাত্র পানীয়। কিন্তু কালক্রমে তা পরিবর্তন হয়েছে। বাজারে এসেছে নানা রকমের কোমল পানীয়, চা, কফি, প্রক্রিয়াজাত ফলের রস ইত্যাদি। কিন্তু এসব পানীয় দেহে কতগুলো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যা আমাদের জানা দরকার। খাবারের সঙ্গে ১ গ্লাস কোকাকোলা খাওয়া মানে বাড়তি ১২-১৩ চা চামচ চিনি গ্রহণ করা। এই অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে বিরূপ বিপাক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে দেহে চর্বি কোষ জন্ম দেয়। ফলাফল ওজন বৃদ্ধি। পানি ছাড়া অন্য যে কোনো পানীয় পাকস্থলীতে এসিড ক্ষরণে উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে যা এসিটিডি তৈরি করে। যা গ্যাস্টিক আলসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
মিষ্টি জাতীয় কোমল পানীয় দঁাতের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত বা ক্যারিস বেড়ে যায়। অবশ্য চকলেট ও অন্যান্য মিষ্টি জাত খাবারও এর জন্য দায়ী। কোমল পানীয়তে ফসফরাস থাকে যা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে অতিরিক্ত ফসফরাস ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিডনি দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে এবং কিডনিতে চাপ পড়ে বিধায় কিডনি দুর্বল হতে থাকে।
বেশিরভাগ কোমল পানীয়তে ক্যাফিন যার শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন হূত্পিণ্ডের জটিলতা, পাকস্থলীর ক্ষত, বিষন্নতা, চিন্তাগ্রস্ততা, ঘুমের ব্যাঘাত ও অস্থিরতা ইত্যাদি। দৈনিক ২-৫ কাপ কপি বা চা তে যে সামান্য ক্যাফিন থাকে তাও ক্রমাগত আসক্তির জন্য যথষ্টে। ক্যাফিন চর্বির বিপাকে ব্যাঘাত ঘটায়। এটি লোহা ও ক্যালসিয়ামের মতো দুটি পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দেয়।
তাই দেখা যাচ্ছে, পানিকে প্রধান পানীয় হিসেবে বেছে নিলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাতে নেই অতিরিক্ত ক্যালরি, নেই চর্বি জমার ভয়, পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর নয়। কাজেই সারা দিন প্রচুর পানি পান করা উচিত। পানি যেমন দেহের বাইরের ময়লা পরিষ্কার করে তেমনি অতিরিক্ত পানি পান শরীরের ভেতরটাকে পরিষ্কার, সজীব, প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। এ জন্য প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি খেয়ে আমরা অনেক অসুখ-বিসুখ ঠেকিয়ে রাখতে পারি ও সুস্থ সবল এবং সুন্দর রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারি।
লেখক: বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ , লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ