বসন্তে এখন গাছে গাছে কচি পাতা। হরেক রকম রঙিন ফুলে সেজেছে ধরণী। তাপমাত্রাও স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এ ঋতুতে রোগ-ব্যাধির প্রকোপও একটু বেশি। হাম, জলবসন্ত, ভাইরাস জ্বর, টাইফয়েড, চুলকানিসহ নানা রোগ এ সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। জ্বরে বাড়ির একজন আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়ে তা অন্য সদস্যদের মাঝে। এভাবে এক ঘর থেকে রোগ বাসা বদল করে অন্য ঘরে। এ ঋতুতে শীতের আবহাওয়ায় ঘুমন্ত ভাইরাস গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই দরকার কিছু সাধারণ জ্ঞান ও সচেতনতা।
প্রথমত একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, ঋতুভেদে যেমন রোগের ধরণে পার্থক্য আছে তেমনি ঋতুভেদে প্রকৃতিতে সব রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও দেওয়া থাকে। ঋতুভেদে উৎপাদিত হয় আলাদা আলাদা ফল ও সবজি। আর এসব ফল ও সবজিতেই থাকে ওই ঋতুর সব রোগের সমাধান। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে মৌসুমী ফল ও সবজি খেলে সহজেই মুক্ত থাকা যায় মৌসুমী রোগগুলো থেকে।
জলবসন্ত:
এটা খুব ছোঁয়াচে রোগ। বিশেষ করে যার কোনোদিন এ রোগ হয়নি, তার ঝুঁকিটা বেশি। সরাসরি সংস্পর্শে এবং রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে জলবসন্ত ছড়ায়। তাই জলবসন্ত হলে যা যা করতে হবে সেগুলো হলো-
১. আক্রান্ত রোগীকে আলাদা রাখতে হবে।
২. রোগীর কফ, নাকের পানি, শুকনো ফুসকুড়ির মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে। আর রোগীর ব্যবহার করা সব কাপড়-চোপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩. পুষ্টিকর ভালো মানের খাবার রোগীকে খেতে দিতে হবে। অনেকের মাঝে এ রোগের ব্যাপারে কিছু কুসংস্কার রয়েছে, যেমন- জলবসন্তের রোগীকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে দেয়া যাবে না। এগুলো খেলে নাকি ঘা পেকে যাবে।' আবার কোনো কোনো রোগীকে বেশি করে ঠাণ্ডা খাবার খেতে দেওয়া হয়। এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা।
৪. চুলকালে এন্টিহিষ্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে দিতে হবে। যদি ঘাগুলো পেকে যায় বা নিউমোনিয়া দেখা দেয় তবে এক কোর্স কার্যকর এন্টিবায়োটিক খেতে হবে। লোকাল এন্টিসেপটিক হিসেবে ফ্লোরোহেক্সিডিন লাগাতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে করতে হবে।
হাম:
হাম একটি অতি মারাত্মক অথচ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি। হাম হলে কিছুতেই রোগীকে ঠাণ্ডা লাগাতে দেওয়া যাবে না। এতে নিউমোনিয়া কিংবা ব্রংকোনিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। হাম হলে শিশুকে প্রোটিন খাওয়া কমানো যাবে না বরং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হবে। এছাড়া প্রতিটি শিশুকে ৯ মাস বয়সে হামের টিকা দিয়ে দিতে হবে।
ভাইরাস জ্বর:
এই ঋতুতে কিছু কিছু টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বরও দেখা দিতে পারে। ভাইরাস জ্বরে সাধারণত সর্দি, কাশির সঙ্গে মাথাব্যথা এবং শরীর ব্যথা দেখা দেয়। প্রথম দিকে এ জ্বর এবং টাইফয়েড জ্বরের মাঝে পার্থক্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে। জ্বরের ধরণ ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি জানা যায়। ভাইরাস জ্বরে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। ভালো ভালো এবং সুষম পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর থাকলে এসপিরিন কিংবা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে দিতে হবে এবং রোগীর মাথায় পানি দেওয়া এবং কোল্ড স্পঞ্জিং দিতে হবে। রোগীকে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে। এ অবস্হায় ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই জ্বরের প্রকোপ কমতে থাকে, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। এই নিয়মে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যালার্জি ও শ্বাসজনিত রোগ:
এই ঋতুতে ফুলের সমারোহ থাকায় প্রকৃতিতে অ্যালার্জেনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। গাছগাছালি থেকে ফুলের পরাগ রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এজন্য এই সময় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হে ফিভার এবং হাঁপানি রোগের আধিক্য দেখা যায়। গ্রাম বাংলায় এই ঋতুতে অ্যালার্জিক এলভিওলাইটিস দেখা দেয়। এটা হাঁপানির মতো এক ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এক জাতীয় ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয় এবং খড়কুটো, গরুর ভুষি ব্যবহারের সময় অ্যালার্জেন (এসপারগিলাস ফিউমিগেটাস) নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে এ ব্যাধির জন্ম দেয়।
এ থেকে মুক্ত থাকতে নাকে-মুখে মাস্ক কিংবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ