ঘুম বা নিদ্রা খুবই দরকারী একটি বিষয়। কিন্তু নানা কারণে অনেকেরই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ঘুম হয় না। আর তাই নিদ্রাজনিত সমস্যা এবং এর জটিলতা বিষয়ে অবহিত এবং সচেতন করার জন্য প্রতিবছর ১৮ মার্চ বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব নিদ্রা দিবস। এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- 'সুখ নিদ্রা সহজলভ্য'। অর্থাৎ আপনি চাইলেই সহজেই অনিদ্রার কারণ জেনে তার চিকিৎসা নিয়ে সুখের ঘুম ঘুমাতে পারেন।
এসোসিয়েশন অফ সার্জন্স ফর স্লিপ এপনিয়, বাংলাদেশ, বিশ্ব নিদ্রা দিবস উপলক্ষে আজ ১৯মার্চ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি সাগর-রুনি অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এর আগে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার, অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, অধ্যাপক জহুরুল হক সাচ্চু, অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ এবং অজ্ঞানবিদ অধ্যাপক মান্নানসহ আরও অনেক বিশেষজ্ঞবৃন্দ।
প্রধান অতিথি হিসাবে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ঘুমের সমস্যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই হতে পারে। বয়সভেদে এর কারণেও ভিন্নতা রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এডিনয়েড ও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত কারণে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। বড়দের বেলায় নাকের হাড় বাঁকা, বড় আকারের টনসিল, নাকের পলিপ এবং সর্বোপরি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এর মূল কারণ। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ ঘুম কম হওয়ার বিষয়টি সরাসরি বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে মুখ হা করে ঘুমানো কিংবা নাক ডাকাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন। উল্টো নাক ডেকে ঘুমানোকে অধিকাংশ লোকজন গভীর ঘুম বলে মনে করেন। সাধারণের এই ধারণার উল্টোটাই সত্যিই।
সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক খোরশেদ মজুমদার বলেন, নাক ডাকা কখনোই স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়। যারা নাক ডাকেন তাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ বা শ্বাসবন্ধ হওয়ার ঘটনা থাকে। এই দমবন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়মিতভাবে অল্প সময়ের জন্য হতে থাকে। কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা না করলে হতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। সূচনাতে সেই সমস্যা সাধারণ শারীরিক অস্বস্তি দিয়ে শুরু হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্টের সমস্যায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে। আর আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। এর বাইরেও এ কারণে কমে যায় উদ্যম, কর্মস্পৃহা। সাধারণভাবে এই স্বাস্থ্য সমস্যার নাম ওএসএ (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া) অর্থাৎ নিদ্রাকালীন শ্বাসবদ্ধতা। এ ধরণের সমস্যায় রোগীর রাত্রিকালীন নিয়মিত ঘুম ভালো বা পর্যাপ্ত হয় না, ফলে সারা দিন ঘুমকাতুরে চোখ নিয়ে ঝিমুনিতে কাটে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘুমের সমস্যা নির্ণয়ে নাক-কান-গলা পর্যবেক্ষণ শেষে স্লিপ স্টাডিসহ অন্য পরীক্ষা করতে হয়। এই সমস্যায় ভোগা বেশিরভাগ রোগীরই ওজন বেশি থাকে, সঙ্গে শ্বাসের পথে বাধাগ্রস্ততা থাকে। কাজেই ওজন কমানোই প্রথম চিকিৎসা; এর বাইরে শ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টিকারী অবধারিত সমস্যা থাকলে অপারেশন করে সে বাধা দূর করতে হবে। তবে বাধাজনিত অপারেশনযোগ্য সমস্যা না থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে সিপ্যাপ মেশিন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ মার্চ, ২০১৬/ রাসেল/ রশিদা