গ্রীষ্মকালে চারদিকে ফলমূলে পরিপূর্ণ থাকে। এই সময় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা ফল পাওয়া যায়। বাজারেও পাওয়া যায় এসব ফল। সুস্বাদু এসব ফলের খাতিরে গ্রীষ্মের জুড়ি মেলা ভার।
এসময়ের ফলের মধ্যে লিচু স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের মতো পুষ্টি উপাদান এটিকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। গ্রীষ্মে তৃষ্ণা নিবারণের পাশাপাশি, লিচু সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। ছোটবড় সবাই এই ফল পছন্দ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিচু খুবই উপকারী একটি ফল। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। লিচু হৃদরোগীদের জন্যও উপকারী।
লিচুর উপকারিতা
এপিকেটেচিনের ভাণ্ডার লিচু হৃদরোগের উন্নতি করতে পারে। এপিকেটেচিন হলো এক ধরনের ফ্ল্যাভানল, এক ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড, যা তাদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। তাই লিচু খাওয়া ভালো।
লিচুতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভোনয়েড, এপিকেটেচিন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর বলে মনে করা হয়। এর শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
এছাড়া এপিকেটেচিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারে।লিচুতে অলিগোনল নামক একটি যৌগ থাকে, যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে। নাইট্রিক অক্সাইড একটি ভাসোডিলেটর। এটি রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যাতে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লিচু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ক্ষতিকারক রোগজীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া লিচুতে থাকা ভিটামিন বি৬ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
লিচু তামার একটি চমৎকার উৎস, এটি চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুল পড়ার সমস্যার যুগে লিচু হতে পারে মোক্ষম দাওয়াই।
লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে, যেমন রুটিন নামক বায়োফ্ল্যাভোনয়েড। রক্তনালীগুলোকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই উপাদানটি প্রয়োজন। তাই নিয়মিত লিচু খাওয়া যেতেই পারে।
ভিটামিন সি থাকার কারণে লিচু রোদে পোড়া নিরাময়ে কার্যকর। ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পলিফেনলের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত লিচু খেলে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল হয়।
লিচুতে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-নোপ্লাস্টিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। এরা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে, যা ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লিচু ওজন কমানোর খাদ্যতালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে ক্যালরি কম এবং চর্বিও কম, যা এটিকে অনেক উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবারের একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প করে তোলে।
লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের কার্যকারিতা উন্নত রাখতে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
লিচু ফাইবারের একটি ভালো উৎস। লিচু খেলে নিয়মিত মলত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং হজমে সহায়তা হতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ