তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি যেহেতু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেজন্য তারা নির্বাচনকে ভয় পায় এবং সে কারণেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছে। জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। তাই তারা নির্বাচন করতে চায় না।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট-পিআইবি’তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি’র বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন করতে চায় না কারণ খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না। তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি- যেহেতু তারা নির্বাচন করতে পারবে না সেজন্য বিএনপির আসলে নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। তারা যে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলে, এগুলো আসলে বাহানামাত্র। আপনারা জানেন- ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনও বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে অংশগ্রহণ করেছিলো নির্বাচনকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করতেন এবং তাকে বিএনপি’র উপদেষ্টা হিসেবে সবাই জানে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহর তালিকা থেকে সিইসি নিযুক্ত হয়েছেন, এজন্য তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং সিইসির ওপর আস্থা রাখার জন্য বিএনপিসহ সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বিএনপি ডা. জাফরুল্লাহকেও অস্বীকার করছে। বিএনপি কখন কাকে অস্বীকার করে, এক সময় কোনো কারণে মির্জা ফখরুলকেও বিএনপি অস্বীকার করতে পারে, সেটাও হতে পারে।’
এর আগে, নিউজ ব্রডকাস্টার্স এলায়েন্স বাংলাদেশ (এনবিএ) আয়োজিত ‘শুদ্ধ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় উপস্থাপকদের ভূমিকা’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের গর্বের বাংলা ভাষায় বিশ্বের ৩৪ কোটি মানুষ কথা বলে এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমাদের ভাষার অবস্থান সপ্তম। ইউরোপের বাইরে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান বাংলা ভাষার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’
যে ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের পূর্বসুরিরা জীবন দিয়েছেন, যথেচ্ছ বিকৃতি করে সেই ভাষার ব্যবচ্ছেদ করা অত্যন্ত দুঃখের উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘সংবাদ উপস্থাপন ও সকল অনুষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলা বলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ক্ষেত্রে মিডিয়া হাউজগুলোর অনেক দায়িত্ব রয়েছে, এটা শুধু খবর পাঠক বা পাঠিকার দায়িত্ব নয়। এজন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন জরুরি। উন্নত রাষ্ট্রের পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠনে সংবাদ উপস্থাপকদের পরিচিত মুখগুলো শুদ্ধ উচ্চারণের মাধ্যমে অনেক অবদান রাখতে পারে।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর তার হাত দিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু। এখন ৪৫টির লাইসেন্স রয়েছে। এতোগুলো টেলিভিশন চ্যানেল হওয়ার প্রেক্ষিতে, এতো গণমাধ্যমকর্মী সৃষ্টি হয়েছে, এতোজন খবর পাঠক-পাঠিকা সৃষ্টি হয়েছে এবং আপনাদের এই সংগঠনের জন্ম হয়েছে। নিশ্চয়ই এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখেন।’
এনবিএ সভাপতি মুমতাহিনা হাসনাত রীতুর সভাপতিত্বে পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও মানষ ঘোষ বিশেষ অতিথি হিসেবে এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। উপস্থাপক জাফর সাদিক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এসময় সংগঠন থেকে দেয়া পরিচয়পত্র সদস্যদের হাতে তুলে দেন মন্ত্রী।
এছাড়া সন্ধ্যায় দৈনিক সময়ের আলো’র তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বাংলা মোটরে পত্রিকাটির কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সময়ের আলো’র প্রকাশক, সম্পাদকসহ সকল গণমাধ্যমকর্মী ও পাঠকদের অভিনন্দন জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দৈনিক সময়ের আলো’র প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কমলেশ রায়, নির্বাহী সম্পাদক হারুন অর রশিদসহ কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক