বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মজুদকৃত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের সাথে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আছে। সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী মোট প্রাথমিক গ্যাস মজুদের পরিমাণ ছিল ৩৯.৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং উত্তোলনযোগ্য প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ২৮.৪২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৯.১১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করার ফলে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৯.৩০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনের আজকের বৈঠকে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব তথ্য জানান। বগুড়া-৫-এর এমপি হাবিবুর রহমানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এসময় তিনি আরো বলেন, মজুদকৃত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের সাথে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আছে। ঘাটতি সমন্বয়ের লক্ষ্যে বর্তমানে এলএনজি আমদানীসহ দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রসমুহের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
গ্যাসের চাহিদা দৈনিক গড়ে ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট:
সরকারি দলের এমপি মোহম্মদ এবাদুল করিমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে দেশের ৩০টি জেলায় বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের (বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প, সার কারখানা, সিএনজি, গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ও চা বাগান) নিকট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রে থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দৈনিক গড়ে ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট রি-গ্যাসিফাইড এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চাহিদার কারণে চলমান গ্যাসফিল্ডের উৎপাদন বাড়ানোসহ নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে আবিষ্কারের জন্য নানামুখি কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে: সরকার দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৩০০ সার্কিট কিলোমিটার। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ৬ লাখ ১০ হাজারে উন্নীত হবে।
বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদা কিছুটা কম:
গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান (সিলেট-২) এর লিখিত প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদা কিছুটা কম। এছাড়া দেশে গ্যাস স্বল্পতার কারণে কিছু কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আংশিক ক্ষমতায় চালু রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী থেকে বিশ্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে বিদ্যুতের চাহিদা এবং বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।
ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভর্তুকি এক হাজার ৩৭৮.৪১ কোটি টাকা:
একই প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাবে বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরো বলেন, জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ প্রদান করার নিমিত্ত সরকার প্রতি বছর ক্যাপটিভ রেন্টাল বা ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ১ হাজার ৭১৪.৭৭ কোটি এবং ২০২০ ২১ অর্থবছরে ১,৩৭৮.৪১ কোটি টাকা ক্যাপটিভ রেন্টাল বা ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভর্তুকি প্রদান করেছে। তিনি আরো জানান, পাওয়ার সেক্টর প্ল্যান-২০১৬ অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এর বিপরীতে বর্তমানে গ্রিড ভিত্তিকবিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট।
পেট্রোবাংলায় বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ তিন হাজার ৮১ কোটি:
সরকারদলীয় এমপি মো. মোজাফ্ফর হোসেন (জামালপুর-৫) এর লিখিত প্রশ্নের জবাবে বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা ও বিপিসি-বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সরকার বেশ কিছু প্রকল্প সমাপ্ত করেছে এবং কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসময় তিনি জানান, পেট্রোবাংলা কর্তৃক গৃহীত চলমান ৩৪টি প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ ১৪ হাজার কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। তন্মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ তিন হাজার ৮১ কোটি সত্তর লক্ষ টাকা এবং দেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ৯১৮ কোটি ৭৬ লক্ষ টাক । এছাড়া পেট্রোবাংলা কর্তৃক ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন ৯টি প্রকল্পে মোট বিনিয়োগের পরিমা তিন হাজর ৪৩৪ কোটি ৭৩ লক্ষ আটানব্বই হাজার লক্ষ টাকা। তন্মেধ্যে, বিদেশী বিনিয়োগ শূন্য এবং দেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরো বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কর্তৃক গৃহীত কার্যকম (বিপিসি) টেকসই ও নিরাপদ জ্বালানির ব্যবহার ও সরবরাহ বৃদ্ধিকল্পে ২০২১ পর্যন্ত ১৬টি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে, ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসময় তিনি জানান, দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশে সর্বমোট ২ লাখ ২৮ হাজার,৫শ’ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সারাদেশে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বিগত ১০ বছরে ৪ লক্ষ ৩১ হাজার মেট্রিকটন বৃদ্ধি করে জ্বালানি নিরাপত্তাকে আরো সুদৃঢ় করা হয়েছে।
বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরো বলেন, চট্টগ্রাম হতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল (ডিজেল) গোদনাইল/ফতুল্লা ডিপোতে পরিবহনের জন্য “চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন" শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড-এ উৎপাদিত ডিজেল ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের লক্ষ্যে ‘ইনডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল