সুন্দরবনে পশুর চ্যানেলে ৫১০ মেট্রিক টন কায়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গোটির উদ্ধারকাজ নয় দিনেও শুরু হয়নি। এমনকি এটির উদ্ধারকাজ কখন শুরু হবে, নাকি আদৌ উদ্ধার করা হবে না- তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এমভি জিয়া রাজ নামের ওই কার্গোটি কয়লা বোঝাই করে ২৭ অক্টোবর খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয়ার পর রাত ৯টার দিকে সুন্দরবনে পশুর চ্যানেলে তলা ফেটে ডুবে যায়।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার গাজী মতিয়ার রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া কর্গোটি উদ্ধারে কোনো প্রকার কার্যক্রম শুরু হয়নি। বর্তমানে এখানে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কয়েকজন কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। তবে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, মালিক পক্ষ কার্গোটিকে উদ্ধার করতে উদ্ধারকারী নৌযান ভাড়া করেছেন। তবে সেটি কখন নাগাদ এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করবে তা তিনি জানাতে পারেননি। এর আগে ডুবে যাওয়া কার্গো এমভি জিয়া রাজের মালিক দিলদার খান জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধারকারীরা কার্গোটিকে উদ্ধার শুরু করবে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক কাজী গোলাম মোক্তাদির জানান, জাহাজটি বর্তমানে বন্দরের মূল চ্যানেলের বাইরে নিমজ্জিত থাকায় এই চ্যানেল দিয়ে জাহাজ ও নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তবে প্রচন্ড স্রোতের টানে এটি নদীর ভেতরের দিকে আরো চলে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরো জানান, এখনো এটি উদ্ধারে অভিযান শুরু না হওয়ায় ধীরে ধীরে কার্গোটি পানির নিচে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। ফলে ছোট বড় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শুধু একটি ভাসমান ড্রাম দিয়ে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। আর ঘটনাস্থল দেখভাল ও নজরদারি করছেন সুন্দরবন বিভাগের কর্মীরা।
এখন পর্যন্ত ডুবন্ত কার্গোটিকে উদ্ধার না করায় বিভিন্ন মহল নানা উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছে। এছাড়া পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সদস্যরা সুন্দরবনে জাহাজ ও কার্গোডুবির ঘটনাকে বনের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, কয়লাবাহী জাহাজডুবির এ ঘটনা আমাদের জন্য একটা সতর্ক বার্তা। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বনের ভেতর দিয়ে এভাবে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, নৌযানের হর্নের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণিকূলের অভয়ারণ্য নষ্ট করবে। তখন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বাড়বে। এ দুর্ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সুন্দরবনের প্রাণিবৈচিত্রের ওপর এর প্রভাব পড়বেই। ক্ষতি হবে সুন্দরবনের।
সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলায় পুলিশ কার্গোর মাষ্টার বুলু গাজীকে আটক করলেও অন্য আসামি কার্গোর মালিক দিলদার খানকে এখনও আটক করতে পারেনি। মংলা থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান জানান, কার্গোর মালিককে আটকের চেষ্টা চলছে। এছাড়া মামলার তদন্ত কাজও দ্রুততার সাথে চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ নভেম্বর ২০১৫/এস আহমেদ