বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অগণতান্ত্রিকভাবে কোন দেশ চলতে পারে না। দেশের মানুষের দাবি আদায়ের জন্য যদি প্রাণও দেওয়া লাগে তবু বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষা করবে। তিনি বলেন, বিএনপির স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেকোনো সরকারের অধীনে করবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে অনড়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত এক গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে দেশে অনেক তরুণকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দুকের জোরে দেশ শাসন করছে সরকার। তবে বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী ব্যালট। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ করা সংগঠন। কিন্তু আজ তারাই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে কবরে পাঠিয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।’
সরকার অদ্ভূত বিরোধীদল দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংসদে কথা বলতে চাই। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সংসদে সত্যিকারের সরকার ও শক্তিশালী বিরোধীদল দেখতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এর আগেও বলেছি, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ক্ষমতায় যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের অধীনেই করব। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। যে সরকারের কোনো দলীয় পরিচয় থাকবে না। এ ব্যাপারে এখনো আমরা দ্বিধাহীন, স্পষ্ট ও অকপট। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সংশয় নেই।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার বড় দুর্নীতি, গণবিরোধী ও ভোটারবিহীন। সে কারণে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে পায়ে দলিত করছে তারা। এ ঘটনা জনগণ, দেশবাসী ও বিশ্ববাসী দেখছে। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করছি। এই দাবি ন্যায়সঙ্গত।
‘এই নির্বাচনে (ইউপি) অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের সে দাবি দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে আরো বেশি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়ার এটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রবিরোধী নই। আমরা নির্বাচন ও জনগণের ম্যান্ডেটের পক্ষে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। এটিই হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন। আর অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হচ্ছে, সেই নির্বাচনের যে কী বিভৎস চিত্র হতে পারে সেটি এই নির্বাচনের (ইউপি) মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘দু’দফা নির্বাচনসহ এ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৪৫ জন নিহত ও পাঁচ সহস্রাধিক লোক আহত হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও সরকারি দলের যৌথ নৃশংস তাণ্ডব নিয়ে বিরোধী দল ও গণমাধ্যম যতই চেঁচামেচি করুক না কেন, নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ পদাধিকারীরা ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে নির্লজ্জের মতো বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।’
এ সময় তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ৪র্থ ধাপে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে ধানের শীষ মার্কায় ভোট চেয়ে বিজয় নিয়ে ঘরে ফেরার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহেদ কামাল চৌধুরী ডালিমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান হান্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি এ্যাড আব্দুল হালিম প্রমুখ।
এর আগে দলীয় নেতা কর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে দলের মহাসচিবকে সংবর্ধনা জানান।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ এপ্রিল, ২০১৬/মাহবুব