গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় এখন চলছে শোকের মাতম। দূরে থেকেও টঙ্গীর আকাশে দেখা যাচ্ছে কালো ধোঁয়া। হাসপাতাল, আর ট্যাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড প্যাকেজিং কারখানা এলাকার সর্বত্রই আগুনে পোড়া মানুষের লাশের গন্ধ। ফ্যাক্টরিতে নিহত আর নিখোঁজ স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে চারপাশ।
শনিবার সকাল থেকেই টঙ্গি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের গেটে ভিড় করে স্বজনরা। হাসপাতালের গেটে লাশ আসা মাত্রই ছুটছেন ভেতরে। স্বজনের পোড়া লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। অনেকেই ছবি নিয়ে ঘুরছেন স্বজনের খোঁজে।
১৯ বছর বয়সী মুরাদ মেশিন হেলপার ছিল ট্যাম্পাকো লিমিটেডের প্যাকেজিং কারখানায়। রাতে কারখানায় গেলেও এখনও তার খোঁজ না পেয়ে হাসপাতালে এসেছেন তার ভাবী সুমি। কান্না জড়ানো কণ্ঠে ছবি দেখিয়ে সবাইকে বলেছেন, ‘মুরাদকে কেউ দেখেছেন ?’
৩৫ বছর বয়সী মাইনউদ্দিনের লাশ খুঁজে পেয়ে কাঁদছেন ভাই আব্দুল আজিজ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে লাশের পাসে বসে কাঁদছেন তিনি।
শনিবার ভোরে ট্যাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড নামের প্যাকেজিং কারখানার বয়লারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাঁচ তলা ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়ে। বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ও চাপা পড়ে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রত্যক্ষদর্শী , হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভোর ৬টায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এখনও ফায়ার সার্ভিসের ২৯ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারাখানাটিতে প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ হয়। প্রতি শিফটে প্রায় ২শ’ শ্রমিক কাজ করেন। বয়লার বিস্ফোরণের সময় কারখানাটিতে পুরোদমে কাজ চলায় ধারণা করা হচ্ছে, তখনও অন্তত তিনশ’ শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। তবে কতজন শ্রমিক বের হতে পেরেছেন এবং কতজন ভেতরে আটকা পড়েছেন বা দগ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান জানান, 'টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ রাখা হয়েছে। এছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন অর্ধশত'।
এদিকে টঙ্গী থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ২৩ জনকে ভর্তি করার পর চার জন মারা গেছেন বলে জানান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান। ঢামেকে চিকিৎসাধীন আছেন ১৬ জন।’
দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এসে আহত রোগীদের খোঁজখবর নেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা ৫ মিনিটের দিকে টঙ্গীর ট্যাম্পাকো প্যাকেজিং কারখানার নিচতলায় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর কাখানায় আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কারখানাটি পাঁচ তলা। সেখানে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। বিস্ফোরণের পর ভবনটি ধসে পড়েছে।'
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আশেপাশের ভবনগুলোতে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছেন এবং উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিয়েছেন। যাতে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়, তার জন্য সচেষ্ট রয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী'।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর