করোনাভাইরাস মহামারীতে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা খরচ, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে না পেরে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। বেসরকারি সংগঠন পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘লাইভলিহুড, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি ডিউরিং কোভিড-১৯’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনের তথ্য মঙ্গলবার এক ভার্চ্যুয়াল সভায় তুলে ধরা হয়।
২০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ চালায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। ৭ হাজার ৬৩৮ পরিবার এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি শহরের পরিবার, ৪৩ শতাংশের বেশি গ্রামের পরিবার এবং ১ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এপ্রিল মাসে ৬ শতাংশ শহুরে দরিদ্র মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যান। জুনে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জুনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
আর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসে শহুরে দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে ৪৩ শতাংশ, গ্রামের মানুষের ৪১ শতাংশ আর পার্বত্য চট্টগ্রামের দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে ২৫ শতাংশ। ১৭ শতাংশ মানুষ জুনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যারা ফেব্রুয়ারিতে কর্মক্ষম ছিলেন।
যারা কাজ হারিয়েছেন
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাসাবাড়িতে কাজ করত যেসব মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগই নারী, তাদের কাজ হারানোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ৫৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরপর আছে অদক্ষ শ্রমিক, দক্ষ শ্রমিক।
তবে কৃষিশ্রমিক ও কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর হার অপেক্ষাকৃত কম। দুই পেশাতেই ১০ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।
লকডাউনের সময় ও লকডাউন তুলে নেওয়ার পর দারিদ্র্য পরিস্থিতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ ধরা হয়েছে গবেষণায়। এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যেখানে শহরে খাবারে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এপ্রিলে তা কমে হয় ৪৪ টাকা। জুনে এসে এটি সামান্য বেড়ে ৪৫ টাকা হয়। শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যয়ে কিছু উন্নতি হয়েছে। কিন্তু গ্রামে পরিস্থিতি লকডাউনের পরেও ভালো হয়নি। গ্রামে ফেব্রুয়ারিতে খাবার ব্যয় ছিল ৫২ টাকা। এপ্রিলে তা কমে ৪১ টাকা হয়, জুনে আরও কমে ৩৭ টাকা।
আয়ের নিরিখে শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১০৮ টাকার বেশি। এপ্রিল তা অনেকটা কমে ২৬ টাকা হয়, জুনে দাঁড়ায় প্রায় ৬৭ টাকায়। গ্রামাঞ্চলে আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রায় ৯৬ টাকা। এপ্রিলে ৩৭ ও জুনে ৫৩ টাকার কিছু বেশি।
করোনাকালে নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হয়েছে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে এক নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হয়েছে। এপ্রিল মাসে তাদের সংখ্যা ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। জুনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন চালু হলো, তখন এ সংখ্যা সামান্য কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। চরম দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র, ঝুঁকিতে থাকা নতুন দরিদ্র এবং নতুন দরিদ্র—সুনির্দিষ্টভাবে এই চার শ্রেণির মতামত উঠে আসে জরিপে।
লকডাউনে যাদের আয় কমেছে
লকডাউনে সব শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে রিকশাচালকদের আয়। তাদের প্রায় ৫৪ শতাংশ আয় কমেছে। এরপর আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও অদক্ষ শ্রমিক।
প্রতিবেদন সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রণোদনা কিছু কাজ করেছে। কিন্তু দেশের কর্মশক্তির ৮০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে জড়িত। সেই জায়গাটা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ