করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর হয়েছে। বাংলাদেশের সুযোগ আছে এসব বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশিত গন্তব্য হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার। এই সুযোগ কাজে লাগাতে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের সীমাবদ্ধতা দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ইয়ুথ পলিসি ফোরাম (ওয়াইপিএফ) আয়োজিত ‘টকিং পলিসিস’ সিরিজের চতুর্থ পর্ব ‘গ্রোথ, কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ম্যাক্রোইকোনমিক পলিসিস’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এই অর্থনীতিবিদ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত সিরিজের এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন ওয়াইপিএফএর উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আখতার মাহমুদ।
এ সময় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পোশাকশিল্প খাত ছাড়া অন্য খাতের ওপরও যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি বিষয়ক পলিসি গ্রহণের আগে বাস্তবতার ভিত্তিতে তাত্ত্বিক দিকও ব্যাখ্যা করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
করোনা মোকাবেলায় দেশের তরুণ সমাজের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনা আসার আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি নিম্নগামী প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। রেমিট্যান্স ছাড়া বাকি অর্থনৈতিক খাতগুলোর অবস্থা খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। করোনার প্রাদুর্ভাবে সেই বিদ্যমান অর্থনীতির ওপর আরও বড় আঘাত আসে। চলাচলের স্বাধীনতা (মবিলিটি) এবং সমাবেশের স্বাধীনতা (অ্যাসেম্বলি), করোনার কারণে এ দুটির ওপর বাধা আরোপ করায় অর্থনীতির দুটি মৌলিক বিষয় অর্থাৎ চাহিদা এবং জোগানের পুরো চেইনটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। এগুলো উত্তরণের জন্য আমাদের দেশের তরুণদের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।’
অর্থনীতির অনেকগুলো মাত্রা ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, একেবারে তলানিতে ঠেকে যাওয়া এই অর্থনীতি ভাইরাসের সংক্রমণ না কমলে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশের সামগ্রিক শিক্ষা খাতের উন্নয়ন বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের টাকা ছাপানোর ব্যাপারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অভিজিৎ ব্যানার্জির সুপারিশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘টাকা ছাপানো’—এ ক্ষেত্রে রূপক হিসেবে বোঝানো হয়েছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আছে, তাদের হাতে যেকোনওভাবে সরকারের নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়া একই উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম