পণ্যের দাম বাড়িয়ে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার গরিব-দুঃখী-মেহনতী মানুষের সরকার। যে সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা লাভের জন্য পণ্যের দাম বাড়ানোর চক্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না।
রবিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির ‘হাসন রাজা মিলনায়তনে’ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হানিফ বলেন, বাজার মূল্য নিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা করা হচ্ছে। দুই বছর করোনায় সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত ছিল। বাংলাদেশেও স্বাভাবিক জীবন ছিল না। রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমত হয়নি। এরকম পরিস্থিতি গোটা বিশ্বে ছিল, যার কারণে বিশ্ব বাজার এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় আসেনি। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে। এর ঢেউ আমাদের দেশেও লেগেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, সুযোগ পেলেই তারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য দাম বাড়িয়ে দেন। যদি কোন অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করতে চায় বা করে- প্রশাসনকে জানাবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। মজুতদারদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের মূল শক্তি উল্লেখ করে হানিফ বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আওয়ামী লীগের টিকে থাকা দুরূহ হয়ে যাবে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের মূল শক্তি, প্রাণভোমরা। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মাটি কামড়ে ছিলো, বিচ্ছিন্ন হয়নি। মার খেয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করার জন্য নিজেদের পকেট থেকে অর্থ ব্যয় করেছে, জমির ফসল বিক্রি করে সংগঠন শক্তিশালী করেছে। নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিলো।
তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর দুই বছরেরও কম সময় বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়ে, সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করে আগামী সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছি।
দলের নেতা-কর্মীদের জামায়াত ইসলামী থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, যারা জামায়াতে ইসলামী করে তারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না। যখন কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। তার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন- কাদের মোল্লার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সৈনিক ছিলেন। আমরা অবাক হলাম। ৭১ সালে রাজাকার ছিল কিন্তু সে ৪৩ বছর পরও পাকিস্তানের কিভাবে সৈনিক থাকে। তার মানে তারা এখনো পাকিস্তানের সৈনিক একইভাবে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ- তাদের যখন রায় কার্যকর হলো পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। নিজামীকে বেসামরিক খেতাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে যারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে, তারা এখনো পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে কাজ করছে। এসমস্ত রাজাকার-আলবদর পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতাকে ধ্বংস করে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই অন্ধকার থেকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল। আজ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে। ২০৩০ সালে ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হবে। আজ দেশের মানুষ লোডশেডিং ভুলে গেছে। অথচ একসময় মানুষ কখন বিদ্যুৎ আসে তাকিয়ে থাকতো। ভারী শিল্পকারখানা ধ্বংসের দিকে চলে গেছিলো। ডাক্তাদের মোমবাতি জ্বালিয়ে অপারেশন করতে হয়েছে। সেই দুর্বিষহ অবস্থার কথা আজ মানুষ ভুলে গেছে।
হানিফ বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সকল শ্রেণির মানুষের সন্তানরা লেখাপড়া করতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বছরের শুরুতে সবাইকে বিনামূল্যে বই দিয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। করোনার দুই বছরে সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত ছিল। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স, ইতালির মতো দেশ করোনায় বিপর্যস্ত ছিলো। করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে, কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আমেরিকার মতো উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে প্রায় সাত লাখের ওপর মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৬০ লাখ। সেই জায়গায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমিত সম্পদ নিয়ে, এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েই করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা করেছেন। বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার এবং সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ফরেন রেমিটেন্স ছিলো। আজ তা ৩২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে শ্রমিক পাঠানোর কারণে এসব সম্ভব হয়েছে। ৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল রফতানি আয়, আজ তা ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এসবের জন্য একজন কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। যার কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়েও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এতো স্বল্পসময়ে এগোতে পারেনি। যা শেখ হাসিনা সরকার করে দেখিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন। এছাড়া সুনামগঞ্জের ৮৮ ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং ১২ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক