স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে সংসার ছমিরন বেগমের। থাকেন জাফলংয়ের আসামপাড়ায়। একসময় বেশ সুখের সংসার ছিল তাদের। স্বামী রহমত মিয়াকে নিয়ে ধলাই নদীতে পাথর তুলতেন ছমিরন। কিন্তু দু’বছর ধরে সেই পাথর উত্তোলন বন্ধ। এরপর থেকে বিকল্প হিসেবে দিনমজুরের পেশা বেছে নেন রহমত। অনটনের সংসার এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যা তছনছ করে দিয়েছে ছমিরনের সংসার। এলাকাজুড়ে চলছে নিরব হাহাকার। তাই হাতেও কাজ নেই রহমত মিয়ার। দু’দিন ধরে ছমিরনের ঘরের চুলাই জ্বলছে না। বাড়ির পাশের দোকানদারও বাকির খাতা বন্ধ করে দিয়েছে। উপায়ান্তর না পেয়ে তিন সন্তানকে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ছমিরন। চিড়া-গুড় খেয়ে স্বামীকে নিয়ে পার করেছেন গেল দু’দিন। এই অবস্থায় দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেয়ে দারুণ খুশি ছমিরন।
আজ বুধবার বিকেলে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে ছমিরন কৃতজ্ঞতা জানান বসুন্ধরা গ্রুপকে। অশ্রুভেজা কণ্ঠে বললেন, ‘দু’দিন বাদে আইজ ঘরর ছুলা জ্বলবো। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপর ভালা খরউক্কা। যেনতাইন-ই ত্রাণ দিছইন আল্লাহ তারার দুনিয়া-আখেরাতর ভালা খরউক্কা।’
সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্বিতীয় দফায় বসুন্ধরা গ্রুপের পাঠানো ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ বুধবার থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে। সিলেট জেলা পুলিশের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি উপজেলার অসহায় পরিবারের মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের এই ত্রাণ বিতরণ উদ্বোধন করেন আজ।
এর আগে, সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও ৭ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠায় বসুন্ধরা গ্রুপ। গত ৩০ মে থেকে সেগুলোও জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে তালিকা করে থানা পুলিশ সেগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ত্রাণ পায়- সে লক্ষ্যে বিতরণ কার্যক্রম মনিটরিং করছেন পুলিশ সুপার নিজেই। সিলেটের মতো সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠায় বসুন্ধরা। সিলেট ও সুনামগঞ্জ মিলিয়ে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়েছেন ২০ হাজার পরিবার।
আজ সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন নিজ হাতে গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের হাজী সোহরাব আলী স্কুল এন্ড কলেজে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ করেন। অসহায় লোকজনের হাতে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দিয়ে তিনি দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করতে বলেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের এই মানবিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপের স্লোগান হচ্ছে ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। অকাল বন্যায় সিলেটের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের স্লোগানের যথার্থতা প্রমাণ করেছে। একটি শিল্প গ্রুপের পক্ষ থেকে জেলার ১২ হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তা অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। এভাবে দেশের সকল শিল্প গ্রুপ এগিয়ে আসলে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অসহায় মানুষের কষ্ট অনেকটা লাঘব হতো।”
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে জেলা পুলিশকে সংশ্লিষ্ট করায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘২০০৪ সালের পর সিলেটের মানুষ এতো ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়নি। বন্যার পানি নামলেও এর ক্ষত রয়ে গেছে। একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজনদের ঘরবাড়ি মেরামতের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, অন্যদিকে দু’বেলা দুমুঠো খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের ত্রাণ দিয়ে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা প্রশংসার দাবি রাখে।’
ত্রাণ বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন, গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম, পূর্ব জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নোবেল, বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নাসির উদ্দিন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ রাসেল, কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রি আসকার আমিন রাব্বি, নিউজ টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপার্সন শফি আহমেদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজনের জন্য দু’দফায় বসুন্ধরা গ্রুপ ২০ হাজার পরিবারের জন্য ত্রাণ পাঠায়। সিলেট জেলা পুলিশ এককভাবে এবং সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রাণগুলো পৌঁছে দিচ্ছে। সিলেটে ত্রাণ কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নোবেল।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক