বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে চূড়ান্ত নীতিমালার অনুলিপি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নীতিমালায় উল্লিখিত নিদের্শনাগুলো ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন। এর আগে সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি চূড়ান্ত নীতিমালার গেজেটের অনুলিপি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
গত ২৯ জুন গেজেট জারি করা হয়। চূড়ান্ত নীতিমালায় বুলিং-র্যাগিংয়ের অপরাধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী বুলিং-র্যাগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।
চূড়ান্ত নীতিমালায় মৌখিক বুলিং-র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর বা অপমানজনক এমন কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনও কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে ইত্যাদিকে মৌখিক বুলিং বুঝাবে। যেমন- উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেওয়া, শারীরিক অসমর্থতাকে নিয়ে উপহাস করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
শারীরিক বুলিং ও র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- কাউকে কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড় মারা, শরীরে পানি বা রঙ ঢেলে দেওয়া, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু মারা, বেঁধে রাখা। কোনও বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেয়া, অথবা কোনও কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা। কারও কোনও জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
সামাজিক বুলিং ও র্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, পেশা, গায়ের রঙ, অঞ্চল বা জাত তুলে কোনও কথা বলা বা অনুরূপ কার্যাদি। পরে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে চূড়ান্ত নীতিমালার গেজেটের অনুলিপি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
প্রসঙ্গত, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে ‘বুলিং’ ও শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরির জন্য অতিরিক্ত শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী এই কমিটি একটি নীতিমালা খসড়া করে ২০১৯ সালে আদালতে দাখিল করে। এরপর নীতিমালা কয়েক দফা সংশোধন, পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত