বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ ১নং রেলগেট এলাকায় রহমতে আলম ইসলাম মিশন ও ইসলাম মিশন এতিমখানায় শিশুদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ সকালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান এবং মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক জিল্লু।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামসহ বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি সারাটি জীবন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিভাবে পরিবর্তন হবে সেজন্য কাজ করেছেন। তিনি বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। কি অপরাধ করেছিল অবুঝ শিশু শেখ রাসেল? তাকেও হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একত্রিত করছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের মাধ্যমে যদিও আমরা স্বস্তি লাভ করেছিলাম তবুও মনে হয় যদি বঙ্গোপসাগরের সমস্ত পানি দিয়ে আমরা এ হত্যার কালো দাগ ধৌত করি তবুও এ কালো দাগ মুছতে পারবো না। তাই এদেশের মানুষ ১৫ আগস্ট একত্রিত হন এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য, হৃদয়ে ধারণ করার জন্য।
শিশুদের মাঝে উপহার বিতরণের জন্য এ মাদ্রাসাকে নির্বাচিত করায় আইজিপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ মাদ্রাসার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তিনি এখানে আসতেন এবং সব সময় মাদ্রাসাটির খোঁজ-খবর রাখতেন। মাদ্রাসাটির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। এ মাদ্রাসার অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজারবাগে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'তোমরা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ নও, তোমরা স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ, জনগণের পুলিশ'। বঙ্গবন্ধুর উপদেশ মেনে পুলিশ কাজ করছে। বাংলাদেশ পুলিশ আজ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। করোনার সময় মানুষ যখন আপনজনের লাশ ফেলে চলে গেছে তখন পুলিশ দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এ দিনটি বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম লজ্জা ও বেদনার দিন। আমাদের সকল অর্জন, গৌরব ও অহঙ্কার ধূলিস্যাৎ হওয়ার দিন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দায়িত্বরত অবস্থায় স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান শহীদ হন।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশকে ভৌগলিক মুক্তি এনে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী এ দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিচ্ছেন। বিগত এক দশক ধরে দেশের প্রত্যেক সেক্টরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশে এখন বিশ্বে 'রোল মডেল'। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ। যতদিন বিশ্বে বাংলাদেশের মানচিত্র থাকবে, বাঙালি থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম থাকবে অমলিন।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে হত্যা করে খুনিরা তার দৈহিক সত্ত্বা কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ী পিতাকে মারতে পারেনি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অবিচ্ছিন্ন ধমনী-স্পন্দন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদৎবরণকারী বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, তাদের পরিবারের সদস্য ও সকল শহিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি এবং অন্যান্য অতিথিগণ শিশুদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে ৮৫০ জন শিশুর মাঝে উপহার বিতরণ করা হয়। এছাড়া, তাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত