রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশের নির্দেশে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বারিষাব ইউনিয়নে নয়ানগর গ্রামে জাহিদুল ইসলাম সজীব নামে এক যুবককে পুলিশের নির্দেশে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যাকারীরা সজীবের পরিবারকে বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা না করতে হুমকি দিচ্ছে। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ ও হত্যাকারীরা সজীবকে ডাকাত বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। নিহত সজীবের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের ঘটনাস্থলের একটি বাড়ির মালিক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘১১ জুন রাত ৯টার দিকে বাড়িতে ডাকাত পড়েছে এমনটা শুনে দৌড়ে আসি। এসে দেখি লোকজন এক যুবককে বেদম পেটাচ্ছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে সজীবকে আহত অবস্থায় দেখতে পায়।’ তবে উপস্থিত অনেকেই জানায়, পুলিশ এসেই কিছু না বুঝে ওঠার আগেই আহত সজীবকে মেরে ফেলার জন্য বলে। গতকাল সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কাপাসিয়ার খিরাটি গ্রামের মৃত জাকির হোসেন মুকুলের ছেলে মেধাবী জাহিদুল ইসলাম সজীব (২০) এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। আর এর পর থেকেই হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সে। পরিবার তাকে বহু চেষ্টা করেও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন সজীবকে ঘরে বন্দী করে রাখেন। ১০ জুন সজীব বাড়ির কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যায়। কোথাও সজীবকে খুঁজে না পেয়ে মা রেবেকা সুলতানা থানায় জিডি করতে যান। ওই সময় থানা পুলিশ একজন মৃত ব্যক্তির লাশ থানায় নিয়ে আসে। সজীবের মা ওই লাশ দেখতে যান। কিন্তু পুলিশ লাশ না দেখিয়ে মোবাইলে তোলা মৃত ব্যক্তির ছবি দেখায়। রেবেকা ওই লাশ তার ছেলের বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু পুলিশ সজীবের মাকে লাশ দেখতে না দিয়ে বিদায় করে দেয়।এলাকাবাসী জানান, সজীব অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। সে প্রাথমিক ও জুনিয়র পরীক্ষায় বৃত্তি পায় এবং এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে বঙ্গতাজ কলেজে ভর্তি হয়। সজীবের মা বলেন, ‘আমি কিছু চাই না। আমি আমার ছেলেকে চাই। আমার নিরীহ ছেলেকে যারা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’ এই বলে তিনি বারবার মূর্ছা যান। সজীবের চাচা আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের বংশের একমাত্র ছেলে সজীবকে পাষণ্ডরা পিটিয়ে চোখ উপড়ে হত্যা করেছে। অথচ আমি জীবিত থেকেও কিছুই করতে পারলাম না। সজীব মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় তার চিকিৎসার জন্য আমি দুবাই থেকে চলে আসি।’ বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের ঘটনাস্থলের একটি বাড়ির মালিক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘১১ জুন রাত ৯টার দিকে বাড়িতে ডাকাত পড়েছে এমনটা শুনে দৌড়ে আসি। এসে দেখি লোকজন এক যুবককে বেদম পেটাচ্ছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে সজীবকে আহত অবস্থায় দেখতে পায়।’ উপস্থিত অনেকেই জানায়, পুলিশ এসেই কিছু না বুঝে ওঠার আগেই আহত সজীবকে মেরে ফেলার জন্য বলে। বারিষাব ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম প্রধান বলেন, এভাবে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা ঠিক হয়নি। বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউজ্জামান বাবলু নৃশংস এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একজন নিরীহ যুবককে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করতে হবে এ কেমন সংস্কৃতি!

কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে (সজীব) উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের নির্দেশে যুবক হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলতেই পারে।

সর্বশেষ খবর