মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কাজ শেষ হয়েছে দুই মাস

কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধে ভাঙন, ধস

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

পদ্মা নদীর পানির তোড়ে সদ্য নির্মিত কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে হঠাৎ ব্লক বাঁধের প্রায় ৩৬ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কালের সাক্ষী কুঠিবাড়ী রক্ষায় ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র দুই মাস আগে এ বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়। বাঁধে ভাঙনের ফলে ফের হুমকির মুখে পড়ল রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীসহ দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক দুর্নীতির কারণে মাত্র দুই মাস আগে নির্মিত বাঁধে এভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে হঠাৎ করে তীব্র ভাঙন শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর অদূরে পদ্মা নদীতে। এতে শঙ্কায় দিন গুনছিল স্থানীয় সচেতন মহলসহ এলাকার মানুষ। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতীর সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুঠিবাড়ী ও আশপাশের জনপদ রক্ষায় ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। শিলাইদহ এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর এলাকায় প্রায় তিন হাজার ৭২০ মিটার দীর্ঘ এ বাঁধ নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট (বিডিপি) লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। তবে মূল ঠিকাদারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড মূলত এ কাজ বাস্তবায়ন করে। মাত্র দুই মাস আগে এ বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়। এতে আশার আলো দেখে স্থানীয় রবীন্দ্রপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে এসব মানুষের আশা-ভরসা এখন ফিকে হতে শুরু করেছে। গতকাল বিকালে বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৬ মিটার বাঁধ নদীতে ভেসে গেছে।

 ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বাঁধের ভাঙা অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। তবে এভাবে বাঁধ রক্ষা করা যাবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বাঁধের আরও বড় অংশ যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তারা এ ঘটনার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, এই বাঁধ নির্মাণে পুকুরচুরি হয়েছে। খুব নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বাঁধ নির্মাণে। ফলে নির্মাণের দুই মাসের মাথায় এভাবে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তবে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা অনেক বড় এবং ভাঙনপ্রবণ নদী। বর্ষায় এ নদী সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে। তাই হঠাৎ করে বাঁধের কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এতে শঙ্কার কিছু নেই।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামানের দাবি, বাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। এ ধরনের বাঁধে ভাঙন দেখা দিতেই পারে। বাঁধ রক্ষায় ইতিমধ্যে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাঁধে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। শিডিউল মোতাবেক সব কাজ করা হয়েছে। বাঁধের যে অংশটি ভেঙে গেছে, পুনরায় তা নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর