বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রতিদিনের হিসাবে যখন ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখন এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া এর বিস্তারে বিধ্বস্ত হয়ে চলেছে। গত রবিবারও দেশটিতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ায় এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ হাজার ৬০৪ জন। যদিও আক্রান্তের দিক থেকে ৪০ হাজার ৭৮৪ জন নিয়ে এদিন শীর্ষ অবস্থানে ছিল ভারত। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে দেশটি। ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। করোনার অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি জাভা দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।’
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম ভারতে শনাক্ত হওয়ায় এটি ভারতীয় ধরন হিসেবেও পরিচিত। গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণের সংখ্যায় আশঙ্কায় বাড়ছে। গত ১৫ জুলাই দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়। সে সময় দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৫৬ হাজার ৭৫৭। অপরদিকে গত ২৭ জুলাই রেকর্ড ২ হাজার ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। গত সপ্তাহে সংক্রমণ কিছুটা কমতে দেখা গেছে। গড়ে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৮০০। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অভিজ্ঞতা থেকে সরকারের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইন্দোনেশিয়ায় রবিবার পর্যন্ত ৩৪ লাখের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছেন ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভ্যাকসিন নেননি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করে ইন্দোনেশিয়া। তবে তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূর্ণ করতে সক্ষম হয়নি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনে দুই ডোজ পেয়েছেন। বিশ্বে মৃত্যু-শনাক্ত আরও কমেছে : আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার হিসাবে বলা হয়েছে, গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় ৮ হাজার ৭৭১ জনের মৃত্যু ও ৫ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৩ জন আক্রান্ত হন। বিশ্বে এ সময় পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার ৭৫৪। এর মধ্যে মৃত্যু ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৩৩১ জন।করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে মোট সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৪ জনের। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৮০ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৯০ জন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৮ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৮০৮ জন। আর ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন ৩ কোটি ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮১ জন।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। তবে মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। সেখানে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৬ জনে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৮। আর সুস্থ হয়ে উঠেছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৩ জন। তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া, পঞ্চম ফ্রান্স, ষষ্ঠ যুক্তরাজ্য, সপ্তম তুরস্ক, অষ্টম আর্জেন্টিনা, নবম কলম্বিয়া, দশম স্পেন। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৬ নম্বরে।