রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ওই গৃহবধূ হলেন ফাতেমা নাসরিন (৪৫)। তিনি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি। শুক্রবার রাত ১টায় আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফাতেমা নাসরিন। এ ঘটনায় ফাতেমার বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ফাতেমার স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেনকে (৪৯)। এরপর তাকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গতকাল মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ফাতেমা নাসরিন ও মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য জীবনে ১৭ বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকে সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার মুখ বন্ধ করে সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা। কিন্তু দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারিতে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেফতারও হয়েছিলেন।
পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকা জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। ৮ মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বঁটি ও মসলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথায় থেঁতলে দেন। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করেন। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ফাতেমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।’গতকাল সকালে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ফাতেমার লাশ দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহনাজ বাবলী বলেন, ‘ফাতেমা ভাতিজি হলেও আমরা তাকে মেয়ে হিসেবে জানতাম। মেয়েটা অনেক গুণবতী ছিল। ১৯ বছরের সংসারে মায়ার কারণে শত অত্যাচার সহ্য করেও নীরব ছিল। আমাদের কাছে কখনো স্বামীর অত্যাচারের কথা মুখ ফুটে বলত না। নির্মম অত্যাচারে আমার মেয়েটা শেষ পর্যন্ত চলেই গেল! এখন তো ফিরে পাব না। আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’
এর আগে ভাতিজির মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল সকালে হাসপাতালে ছুটে যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন, শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া।