মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় মাদক যেন ফেরিওয়ালার বাদাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতায় হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ যে কোনো ধরনের মাদক। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার একাধিক স্পটে কেনাবেচা চলে দিনরাত। উপজেলা পাঁচগাঁও, রাজনগর, কামারচাক ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি। মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জানা গেছে, আগে গোপনে মাদক বেচাকেনা চললেও বর্তমানে প্রকাশ্যেই বিক্রি করছে কারবারিরা। মাদকের করাল গ্রাসে আসক্ত হয়ে ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তালিকায় আছে যুবসমাজ, স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে উপজেলাজুড়ে মাদকসেবীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকমহল।
সূত্রমতে, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারা ফেনসিডিলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। উপজেলার গ্রামপর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বাজারে প্রকাশ্যেই মাদকের কারবার হচ্ছে।
এদিকে মাদকের সর্বনাশ থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মাঠে সোচ্চার হচ্ছেন স্থানীয় অভিভাবকসহ সচেতন মহল। করছেন মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন। গত ২৭ অক্টোবর রাজনগর সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ খারপাড়া গ্রামে মাসুদ নামে এক মাদক কারবারির ঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় জনতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, মাদকের ভয়াল নেশায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।
মোরাদ হোসেন নামের এক সমাজসেবক জানান, এলাকার ও বাইরের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় অতীতের চেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মাদক। মাদক সিন্ডিকেট গ্রেপ্তার করে ভাঙা না হলে মাদকসেবী ও কারবারি বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসনের কাছে উপজেলাবাসীর দাবি দ্রুত যেন মাদক কারবারি ও সেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোবারক খান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সচেতন। মাদকারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।