২৫ মে, ২০২০ ১৪:১৩

এমন ঈদ কখনো দেখিনি

আহমেদ আল আমীন

এমন ঈদ কখনো দেখিনি

আহমেদ আল আমীন

আজকের দিনটি হতে পারত আগেকার সব ঈদের মতই। দিনটি হতে পারত পুরনো স্বাভাবিক, ছন্দময়। সেটাই প্রত্যাশিত ছিলো। কিন্তু, এবারের ঈদটি বিশেষ ব্যতিক্রম। একেবারেই অন্যরকম।

এখন দুঃসময়। ফলে এই ঈদে রোযা ভঙ্গ করার অনাবিল আনন্দে ছেদ ঘটছে। বন্ধু ও স্বজন বা প্রতিবেশির সঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ উপভোগ করা যাচ্ছে না। ঘরে বন্দি আনন্দ। মনে হয় যুদ্ধ কবলিত জনপদের ঈদ। যুদ্ধটা বিশ্বজুড়ে হওয়ার কারণে এবার বর্ণহীন ও নীরস ঈদটি এসেছে সারা পৃথিবীতে। এমন ঈদ কখনো দেখিনি। পৃথিবীর ইতিহাসেও নেই। বিষাদ ভরা, বিষাদে ভরা ঈদ।

এমন পরিস্থিতিতেই রোযা এসেছে, সিয়াম সাধনা হয়েছে এবার রমজানে। পৃথিবীর কোনো কোনো জনপদ এমন ঈদ ও রোযার সঙ্গে আগে থেকে পরিচিত থাকলেও একযোগে বিশ্বের সর্বত্র এমন রোযা ও ঈদ আর হয়নি। আর হবে কিনা তাও জানি না। 

ঘরে বন্দি থেকে বিভিন্ন জনপদের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার ধরন ও অনুভূতি অনুভব করছি। প্রতিটি মুহুর্তে চোখ-কান খোলা রেখে, সতর্কতার সঙ্গে সময় পার করতে হচ্ছে। শত্রুর আগমন ও আক্রমণ হতে পারে যে কোনো সময়। কত মৃত্যু, ভয়, ক্ষুধা ও দারিদ্রের দুর্গম-বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। এই পথের হাতছানি ভবিষ্যতেও। এভাবে কি ঈদ হয় আসলে? 

সেটাই দেখলাম এবার, বিশ্ববাসী একযোগে। ধুসর ও গুমোট পরিবেশে বিবর্ণ ঈদ। আজ ঈদ হলেও তাই মনটা বেশ খারাপ। এবার ঈদে আনন্দে উদ্বেলিত হয় না মন, সেই অনাবিল আনন্দের আবহ আজ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। সবকিছু থমকে গেছে। মুমিন হৃদয়ের ময়দান কাবা শরিফ ও মসজিদে নববিতে তালা। ঈদের নামাজ হয়নি। প্রায় একই অবস্থা পৃথিবীর দেশে দেশে। ক্ষুদ্র পরিসরে মসজিদে ঈদের নামাজ। বাসায় পড়েছে অনেকে। অনেকে আবার ফরজে কিফায়া হিসেবে আর আদায়ই করেনি।    

লাখ লাখ মানুষ অদৃশ্য শত্রুর হামলায় বিধ্বস্ত। মশা, মাছি কিংবা কুকুর, বিড়ালের মতো মারা যাচ্ছে মানুষ। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা মন থেকে মুছে যায়নি। সদ্য স্বজন হারানোর চাপা কান্নার বেদনায় নীল আকাশ, বাতাস এখনো ভারি। এখনো বাঁচা-মরার প্রহর গুনছে জীবিত সব মানুষ। 

তবু ঈদ আসে। দরজায় কড়া নেড়েছে এবারও। তাই মন খারাপ থাকলেও আজ ঈদ। ঈদ মানে নাড়ির টানে বাড়ি গিয়ে পারিবারিক বার্ষিক সম্মিলন, সকল প্রাণের মিলনমেলা। ঈদ মানে আনন্দ, খুশি। স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো। ঈদ মানে কোলাকুলি, করমর্দন, ঈদ সেলামি। নতুন পোশাক। শাড়ি-চুড়ি; আরো কত সাজগোজ।  

ঈদ মানে ভোরে আযানের পর মসজিদে গিয়ে ফজরের সালাত আদায়। গ্রামের মেঠো পথে চলতে চলতে পাখিদের সঙ্গে গান। মৃদুমন্দ বাতাসের ছোঁয়া। কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত। ফাঁকে একবার রান্না ঘরে ঢু মেরে আসা। চুলার পাশে মায়ের ব্যস্ততা। বাপ-ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে। জুমার চেয়েও বড় জমায়েত সেখানে। এইতো চিরচেনা ঈদ। কোথায় গেল সেই ঈদ।

তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই আল্লাহর কাছে শোকর করতে হবে। সব সময়ই মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপায় খোঁজে মুমিন হৃদয়। এই সময়ে, এখনো যে বেঁচে আছি; এটাই প্রকৃত ঈদ। লাখো শুকরিয়া তোমার দরবারে মালিক। ঈদ উদযাপনের চেয়ে বাঁচার লড়াইয়ে টিকে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। 

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

সর্বশেষ খবর