১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৫১

মেলবন্ধনে অনন্য স্রষ্টা সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লা

ব্যারিস্টার সৈয়দ রুম্মান

মেলবন্ধনে অনন্য স্রষ্টা সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লা

রুনা লায়লা

রুনা লায়লা! এরপর আর কোনো উপমা, উপাধি কিংবা বিশেষণের প্রয়োজন পড়ে না। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছেন সেও কয়েক যুগ হতে চলেছে। রুনা লায়লার সঙ্গীত জীবনের আলোচিত অভিষেক ঘটে তাঁর সেই ১২ বছর বয়েসে। তারপর থেকে তাঁর বিরতিহীন ছুটে চলা।

সঙ্গীতের এমন কোনো শিখর নেই যেখানে তাঁর গর্বিত স্পর্শ পড়েনি। পৃথিবীর আঠারোটি প্রধান ও উল্লেখযোগ্য ভাষায় গান গেয়ে তিনি তাঁর শ্রোতাকে করে যাচ্ছেন বিমোহিত। গজল থেকে শুরু করে বিশ্ব সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখায় আছে তাঁর যাদু-কণ্ঠের চিহ্ন। ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিং তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘প্লিজ গিভ আস রুনা লায়লা, অ্যান্ড টেইক অল দ্য ওয়াটার অফ ফারাক্কা।’ বাংলাদেশের হয়তো ফারাক্কার ন্যায্য পানি এখনো পাওয়া হয়নি কিন্তু রুনা লায়লার মতো অতুলনীয় এক প্রতিষ্ঠান আছে যাঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পরিচিতি বিস্তৃত; সঙ্গীতে অর্জন করেছে শৈল্পিক মাধুর্য।

এই শিল্প মানুষের মানবিকতাকে পরিচর্যার প্রকরণের মাধ্যমে করে তোলে ঐশ্বর্যমণ্ডিত। আর এ শিল্পের অনেক রূপের মাঝে একটি হচ্ছে সঙ্গীত। আবার এ সঙ্গীত এমন এক শিল্প যা আশ্চর্যজনকভাবে হৃদয়স্পর্শী সুরের উপস্থিতিতে হয়ে ওঠে জ্যোতির্ময়। অথচ সঙ্গীত একটি দলবদ্ধ শিল্প। তাকে এককভাবে দেখার জো নেই বললেই চলে। 

কথার সাথে সুর, মাত্রা, তালের সমন্বয় ও বাদ্যযন্ত্রের নিপুণ ব্যবহারের মাধ্যমে সুললিত কণ্ঠ বেয়ে সে সঙ্গীত এসে যখন আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করে তখনই সে আমাদের হৃদয় পেরিয়ে মস্তিষ্কে এক চিত্রকল্প তৈরি করে। আমাদের অন্তর্জগতকে নিয়ে যায় অন্য অনন্য এক জগতে। বিমুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে যাওয়াই যেন তার অন্তিম লক্ষ্য।

প্রচলন আছে সঙ্গীতের কোনো সীমারেখা নেই; ভাষা ও কাঁটাতার পেরিয়ে সে স্থান নেয় আমাদের মনের মণিকোঠারে। সঙ্গীত সে নিজেই একটি ভাষা। তাই হয়তো ল্যাটিন সঙ্গীত হয়ে ওঠে ইংলিশভাষীর ভাষা, বাংলা ভাষার সঙ্গীত বেজে ওঠে উর্দুভাষীর মুখে কিংবা ক্যারিবিয়ান সঙ্গীত হয়ে যায় আমেরিকানদের কাছে প্রিয় আর হিন্দি সঙ্গীত বাজতে থাকে অ্যারাবিয়ানদের ঘরে। 

এ কারণেই হয়তো সর্বজনীন শিল্প হিশেবে সঙ্গীত কোনো জাতির সংস্কৃতির অনন্য এক পরিচায়ক হয়ে ওঠে। আবার সঙ্গীতের মাধ্যমে তৈরি হয় ভিন্ন জাতির মেলবন্ধন। আর এ মেলবন্ধনের এক অনন্য স্রষ্টা রুনা লায়লা। তাঁর সফল পরিচালনা আর উপস্থাপনায় বাংলা সঙ্গীতকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন এক অনন্য মাত্রায়। 

গত ২০১৯ সালে রুনা লায়লা শুরু করেছিলেন ‘লেজেণ্ডস ফরেভার’ প্রজেক্ট যেখানে তিনি ভিন্নভাষী কিংবদন্তী শিল্পীদের সঙ্গে করিয়েছেন বাংলা গানের মেলবন্ধন। আশা ভোঁসলে, হারিহরণ, রাহাত ফাতেহ আলী খান, আদনান সামী ও রুনা লায়লা গেয়েছেন কয়েকটি বাংলা গান। 

সিটি ব্যাংকের প্রযোজনা ও বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সহযোগিতায়, রুনা লায়লার সুর ও রাজা কাশেফের সঙ্গীতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির ও কবির বকুলের কথায় গাওয়া গানগুলি ইতোমধ্যে জয় করেছে কোটি মানুষের মন; প্রথমআলোর ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে গানগুলো ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন বিশ্বে। 

রুনা লায়লার এই উদ্যোগকে ইউটিউবের অগণিত শ্রোতা করেছেন আন্তরিক প্রশংসা ও তাঁকে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। রুনা লায়লার গাওয়া ‘আজ এতোদিন পর’ গানে মন্তব্য করতে গিয়ে মনোয়ার হোসেন মামুন নামে একজন শ্রোতা রুনা লায়লাকে নিয়ে ইউটিউবে লিখেছেন, ‘অসাধারণ। দ্যা লিজেন্ড অব বাংলাদেশ। আপনি বাংলাদেশের সম্মান।

এই জায়গাটি একটু অভাব ছিল আজ আপনি কানায় কানায় পূর্ণ। প্রিয় রুনা লায়লা আপনি বেঁচে থাকুন হাজার বছর।’ এভাবেই অগণিত সঙ্গীত প্রেমীর ভালোবাসা ও আশীর্বাদে সিক্ত রুনা লায়লা এবার বাংলাদেশের এই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের বিশ্ব সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গ্রহণ করলেন আরেকটি উদ্যোগ। বাংলাদেশের বর্তমানের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে ১৭ নভেম্বর রুনা লায়লার জন্মদিনে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে রুনা লায়লার সুর ও রাজা কাশেফের সঙ্গীতায়োজনে চারটি গান। 

তার মধ্যে বাংলাদেশের স্বনামধন্য গীতিকার কবির বকুলের কথায় ‘ফেরাতে পারিনি’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা নিজেই যা ২০১৯ সালে তাঁর জন্মদিনে ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে প্রকাশিত হয়। কবির বকুলের লেখা অন্য দুটি গান ‘কোথায় রেখেছো আমায়’ ও ‘আকাশে মেঘ জমেছে এ মনের মেঘ দেখোনি’ যথাক্রমে গেয়েছেন এ প্রজন্মের প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীর ও হৈমন্তি রক্ষিত। 

রুনা লায়লার মেয়ে সুকণ্ঠী তানি লায়লা ও জিনিয়া জাফরিন লুইপা’র কণ্ঠে গাওয়া ‘আমি কেনো তোমারই হয়ে গেছি পর’ ও ‘এ দেখা শেষ দেখা’ গান দুটি লিখেছেন কিংবদন্তী গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আর এই পুরো উদ্যোগের সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন অভি মঈনুদ্দীন। 

তবে ১৭ নভেম্বর ২০২০-এ রুনা লায়লার জন্মদিনে শুধু প্রকাশিত হবে নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী লুইপা’র কণ্ঠে গাওয়া গান ‘এ দেখা শেষ দেখা’। রুনা লায়লা জানান, লুইপা অনেক মেধাবী ও সম্ভাবনাময় কণ্ঠশিল্পী , সে দরদ দিয়ে গান গায়। আমি তাকে যেভাবে দেখিয়েছি সেভাবেই সে গানটিকে তার কণ্ঠে ধারণ করেছে। আমি তার কাজে খুবই খুশি হয়েছি এবং আমার বিশ্বাস শ্রোতারা তার এই নতুন গানটিকে সানন্দে গ্রহণ করবে। পরবর্তী তিন সপ্তাহে বাকি তিনজন কণ্ঠশিল্পীর গান এক এক করে প্রকাশিত হবে প্রতি সপ্তাহে। আর এই সবগুলো গানই পাওয়া যাবে ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে। সবকটি গানেই শ্রোতারা পাবেন ভিন্নতা।

রুনা লায়লা ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই উদ্যোগ নিয়ে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, প্রতিভাবান ধ্রুব গুহের আন্তরিক সহযোগিতায় এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি অনেক যত্ন করে কাজগুলো সম্পাদন করেছেন। আমি তার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি পুরো প্রজেক্টটিতে আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করায় সহযোগিতা করেছেন। আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই কাজগুলো করতে পেরেছি। যে কারণে প্রজেক্টটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ কণ্ঠশিল্পীদের নিয়ে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রুনা লায়লা বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক সম্ভাবনাময় ও প্রতিভাবান তরুণ কণ্ঠশিল্পী আছে। আমি তাদের নিয়ে গর্বিত। আমাদের একটু সহযোগিতায় তারা অনেক ভালো কাজ উপহার দিতে পারবে। 

আমাদের যাদের পরিচিতি আছে তাদের উচিত এই প্রতিভাবান তরুণ শিল্পীদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেওয়া। আমি সবসময় তরুণ শিল্পীদের পাশে ছিলাম এবং থাকবো। আমি সবসময় চেয়েছি নতুনরা এগিয়ে আসুক। আঁখি আলমগীর তো ইতোমধ্যেই একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী।

তাছাড়া এই প্রজেক্টিতে যারা গান গেয়েছে তারা প্রত্যেকেই মেধাবী। শুধু এই মেধাটাকেই বের করে নিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে একটি সঠিক প্লাটফর্ম দিতে হবে যাতে করে তারা তাদের প্রতিভা প্রকাশ করার সুযোগ পায়, তাদের কাজ অনেক মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছোয়। তারা সফল হলে আমি আনন্দিত হবো।

রুনা লায়লার এই দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে এমন কোনো অপূর্ণতা ছিলো কিনা যার কারণে তিনি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন, এই কথার উত্তরে মহান আল্লাহ্‌র প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র অশেষ রহমত ও সবার দোয়ায় তিনি মনে করেন চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছেন। তাঁর কোনো অপূর্ণতা বা অতৃপ্তি নেই। তাঁর সঙ্গীত ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। 

এই দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে যা পেয়েছেন এখন পর্যন্ত তার জন্য তিনি তাঁর ভক্ত, শ্রোতা ও সকল সঙ্গীত-প্রেমী মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার কারণেই এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পেরেছেন। এই কারণে তিনি মনে করেন নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে পারলে তাঁর ভালো লাগবে এবং তিনি চান যে নতুনরা সবসময় ভালো করুক। 

তিনি মনে করেন এই প্রজন্মের শিল্পীদের যদি কিছু দিয়ে যেতে পারেন, সেটি যতোটুকুই হোক, এটিই তাঁর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি হবে। শান্তি ও তৃপ্তি পাবেন এই ভেবে যে এই প্রজন্মের কাছে তিনি কিছু একটা দিয়ে যেতে পেরেছেন।

রুনা লায়লা তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত এই প্রজেক্ট নিয়ে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে বলেন, এই প্রজেক্টটিতে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীনের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। অভি মঈনুদ্দীনের কাছে তাঁর ইচ্ছের কথা প্রকাশ করলে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য তিনি এগিয়ে আসেন। 

যদিও নতুন প্রজন্মের এই শিল্পীদের গান শ্রোতারা শুনছেন, তবুও এই প্রজেক্টের মাধ্যমে রুনা লায়লার সহযোগিতায় শ্রোতারা তাদের কণ্ঠে ভিন্ন ঘরানার কিছু গান শুনতে পারবেন এবং এই অনুপ্রেরণা তাদেরকে আরও ভালো কাজ করতে সহায়তা করবে।

বর্তমান প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে রুনা লায়লা জানান, কিংবদন্তী গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও স্বনামধন্য গীতিকার কবির বকুলের উপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ২/৩ দিন রিহার্সেল করে শিল্পীরা গানগুলো তাদের কণ্ঠে ধারণ করেন। 

এ প্রসঙ্গে রুনা লায়লা স্মরণ করেন তাঁদের সময়ের কথা যখন রিহার্সেল করে গান রেকর্ড করা হতো। ঠিক একইভাবে এই প্রজন্মের শিল্পীরাও সময় ও যত্ন করে আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে গানগুলোকে তাদের কণ্ঠে ধারণ করেছেন। এই ব্যাপারটি তাঁকে এই প্রজন্ম নিয়ে অনেক আশাবাদী করেছে। 

এই প্রসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানান বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনয়ার ও খ্যাতিমান গীতিকার কবির বকুলকে যারা শুধু গানগুলো লেখেনইনি বরং শিল্পীদের কণ্ঠে গান তোলা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেছেন। 

বাংলাদেশের ব্যতিক্রমধর্মী ব্যান্ড সঙ্গীতের দল চিরকুটের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রুনা লায়লা। চিরকুটের স্টুডিওতেই ধারণ করা হয় সবকয়টি গানের রেকর্ডিং। মিউজিক ভিডিওর জন্য রুনা লায়লা আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মিউজিক ভিডিওর পরিচালক চন্দন রয় চৌধুরীকে।

রুনা লায়লার সঙ্গে আলাপচারিতার ফাঁকে তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ব্রিটিশ-এশিয়ান মেধাবী তরুণ মিউজিক কম্পোজার রাজা কাশেফকে। তিনি বলেন, রাজা কাশেফ একজন অত্যন্ত মেধাবী তরুণ মিউজিক কম্পোজার। ‘লেজেন্ডস ফরেভার’ সহ আরও বেশ কয়েকটি কাজে রাজা তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তার কাজের জন্য তিনি ইতোমধ্যেই অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। 

রুনা লায়লা আরও বলেন, সঙ্গীতের কোনো সীমান্ত নেই, তার সীমা সে নিজেই। তারপরও বাঙালি না হয়েও
বাংলা গানের প্রতি রাজার অনুরাগ তাঁকে সবসময়ই গর্বিত করে। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে এই প্রজেক্টেও রাজা তার মেধার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। 

এই প্রসঙ্গে এক আলাপচারিতায় রাজা কাশেফ বলেন, বাংলা সঙ্গীতের প্রতি সবসময়ই তিনি বিশেষ একটি টান অনুভব করেন যার প্রথম কারণ বাংলা-ই হচ্ছে পৃথিবীর বুকে একমাত্র ভাষা যার জন্য রক্ত ঝরিয়ে আন্দোলন হয়েছে। ভারতের গুরুদাসপুর থেকে ষাটের দশকে বিলেতে আসা তার বাবার মুখে ভাষা আন্দোলনের গল্প শুনে বিলেতের মাটিতে জন্ম গ্রহণ করা রাজা কাশেফ সবসময়ই ভাবতেন সুযোগ পেলে তিনি বাংলা ভাষায় কোনো কাজ করবেন। 

রাজা আরও বলেন, বাংলাভাষী ও বাংলাদেশের অনেক সঙ্গীতশিল্পী ও ওস্তাদ রয়েছেন যারা উপমহাদেশে পরিচিত ও খ্যাতিমান। তাই উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লার স্নেহের আঁচলে কাজ করাটিকে তিনি মনে করেন তার জন্য অনেক গর্ব, সম্মান ও আশীর্বাদের। 

রুনা লায়লার বিশালত্বের পরিচয় দিতে গিয়ে রাজা কাশেফ বলেন, রুনা লায়লা শুধু উপমহাদেশেরই কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী নন, তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সঙ্গীতের একজন আইকন যার নামের আগে কিংবা পরে আর কোনো বিশেষণ ব্যবহার করতে হয়না, অথচ মানুষ হিসেবে তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বিনয়ী। 

তাঁকে দেখে শিখেছি মানুষ যতোই বড় আর প্রতিষ্ঠিত হোক না কেনো তার ব্যবহার তাকে স্মরণীয় করে এবং মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় তারাই বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ের গভীরে। তাই রুনা লায়লার জন্মদিনে রাজা কাশেফ সবার মতোই দোয়া করেন তিনি যেনো দীর্ঘায়ু নিয়ে মানুষের মাঝে অহর্নিশ বেঁচে থাকেন।

সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো বিনয়ী ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারি বাংলা সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লার স্থায়িত্ব কিংবা ব্যপ্তি শুধু কোনো সীমারেখায় বন্দি নয়, বরং তাঁর উপস্থিতি ছড়িয়ে আছে ও থাকবে বিশ্বসঙ্গীতে। আর তাঁর এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণেই তিনি বাংলা সঙ্গীত জগতকে তাঁরই জন্মদিনে উপহার দিচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের নিয়ে এই প্রজেক্ট যার মাধ্যমে সঙ্গীত জগত হবে ঋদ্ধ।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করা রুনা লায়লা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর মাটির টানে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। রুনা লায়লা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অর্জন করেছেন ৩০০টিরও বেশি পুরস্কার।

আজীবন এই খ্যাতির পরশ ছোঁয়া রুনা লায়লা বাংলাদেশকে ধারণ করেন তাঁর সমগ্রতায়; তাঁর জন্মদিনকে সামনে রেখে ভাবেন, তাঁর আদি ও অন্তের পুরোটা জুড়েই রয়েছে বাংলাদেশ যাঁর জল, হাওয়া ও মাটিতে গড়ে ওঠা আজকের সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লা। তাঁর সঙ্গীতের এই বর্ণাঢ্য জীবন জন্মদিন ছাপিয়ে হোক নিয়ত প্রবহমান।

লেখক: আইনজীবী, লেখক, কবি ও সঙ্গীত অনুরাগী

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

সর্বশেষ খবর