২৫ জুন, ২০২২ ১২:৫৫

মহাকালের দূরত্ব ঘুচিয়েছে পদ্মা সেতু

ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন

মহাকালের দূরত্ব ঘুচিয়েছে পদ্মা সেতু

ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন।

তখন আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মাদারীপুর থেকে ঢাকা আসা ছিলো এখনকার সময়ে ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতির মতো। মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট থেকে বিকেল চারটায় লঞ্চে উঠলে ঢাকা এসে পৌঁছাতাম সকাল ছয়টায়। চাঁদপুর ঘুরে ঢাকায় আসতে মনে হতো এ যেন মহাকালের দূরত্ব। মুন্সিগঞ্জের তালতলা দিয়ে আসতে অনেক সময় ডাকাতের কবলে পড়তো হতো। বর্ষায় আড়াআড়ি প্রমত্তা পদ্মা পাড় হওয়া ছিলো রীতিমত বিভিষীকা। শীতেড় রাতে অনেক সময় লঞ্চ ডুবোচরে আটকে পড়তো। জোয়ার না আসা পর্যন্ত ওখানেই বসে থাকতো হতো লঞ্চের যাত্রীদের। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনবে এই পদ্মা সেতু। 

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়। তখনই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু সেতুই পদ্মা সেতু নির্মাণের আশা জাগিয়েছিল। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা নামটি মুছে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা কবলিত জনপদ। কিন্তু বিশ্বে আমাজনের পরেই সবচেয়ে খরস্রোতা নদী এই পদ্মা। প্রতি সেকেন্ডে মাওয়া পয়েন্টে এক লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়, এমন হিসাব মিলেছে ১০০ বছরের তথ্য থেকে। আমাজন নদীর পরেই কোনো নদী দিয়ে এত পানি প্রবাহিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় প্রতি ১ সেকেন্ডে ৯০ হাজার ঘন মিটার পানি। প্রবল স্রোতকে বাগে এনে সেতু করা ছিলো দূরহ কাজ। তার সঙ্গে নানা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, দাতা সংস্থার তালবাহানায় পদ্মা সেতুকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ছিলো প্রায় অসম্ভব। 

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন অবিচল। তার দৃঢ় চেতা সাহসী সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু আজ বাস্তব। অনেক বিশেষজ্ঞ, নেতাকর্মী পদ্মা সেতু নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তব। সেতু নির্মাণে সরব অবস্থান ছিলো দেশ বরেণ্য প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের। পদ্মা সেতুর পক্ষে জনমত গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 

পদ্মা সেতুর প্রতক্ষ্য সুফল পাবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এই অঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিতে বেশ শক্তিশালী। পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের প্রতিবন্ধকতার কারণে শিল্পের বিকাশে বাধা ছিলো। ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা মূলত ট্রেডার্স। বিশ্ব মানের পাট উৎপাদন হয় এই এলাকাগুলোতে। এখন শিল্প কারখানা, পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে আর কোন বাধা থাকবে না। দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে এ সেতু। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে, যা অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেবে। মংলা বন্দর, বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন হবে সাশ্রয়ী এবং ঝামেলামুক্ত। পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। এটি শুধু সেতুই নয়, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এর ফলে আমাদের ভৌগোলিক যে বিভাজন ছিল, তাতে সংযোজন স্থাপন হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা একীভূত অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হবে।

লেখক: উপাচার্য, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর