শিরোনাম
৩০ জুলাই, ২০২২ ১৪:৩১

শিক্ষামন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, আপনি?

আরিফুর রহমান দোলন

শিক্ষামন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, আপনি?

আরিফুর রহমান দোলন

এ-ও এক দারুণ সমাপতন! সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। আর সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রেখে রাজনৈতিক সমাবেশ করায় ক্ষমা চাইলেন আমাদের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি ভুল স্বীকার করলেন। বিব্রত ডা. দীপু মনি প্রকাশ্যেই জানালেন, কাজটি তিনি মোটেও ঠিক করেননি। 

ডা. দীপু মনিকে আমি ধন্যবাদ জানাবো। তাঁর সরল স্বীকারোক্তির জন্য, বিনয়ের জন্য। নিজের কাঁধে দায়-দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসা আমি করবো। রাজধানীর দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতি কতটা সঙ্গত ছিল? সেই প্রশ্ন এখন আর করবো না। 

বিশেষত, গণমাধ্যমে এ প্রশ্ন উত্থানের পরে গত বুধবার (২৭ জুলাই) ডা. দীপু মনি প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভুল স্বীকারের সংস্কৃতি যেখানে আমাদের সব ক্ষেত্রেই বিরল সেখানে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী এটা স্পষ্ট করেছেন, তাঁর অহংবোধ নেই। 

এই গুণাবলীর জন্য আপনি আপনারা কি ডা. দীপু মনিকে ধন্যবাদ দেবেন না? নিউজরুমে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে একগাঁদা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। দেশের শিক্ষার মানের অধোগতি নিয়ে আপনি কি বলবেন? বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বিতর্কের দায় কার? চাঁদপুরে নদী, মাটি বালুখেকো ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানদের বাড় বাড়ন্তই বা কাদের প্রশ্রয়ে? এভাবে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে খানিকটা হকচকিয়ে যাই। চুপচাপ হয়ে ফিরে আসি।

তবু আমি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পক্ষেই কথা বলবো। তাঁর সাফাই গাইবো। কারণ, তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেননি। পাল্টা কোনো যুক্তি দেননি। অতীতে অন্য অনেক সরকারের আমলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক সমাবেশের উদাহরণ টানেননি। 
আমার ঠিক জানা নেই ডা. দীপু মনি ঠিক কতটা মিতভাষী। তবে তিনি যে তুখোড় যুক্তিবাদী, এটা আমরা জানি। বিশেষ করে শিক্ষাজীবনে বিতার্কিক হিসেবে তাঁর সুনাম এখনো অনেকের মুখে মুখে। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী নমনীয়, মার্জিত। সবচেয়ে বড় কথা- কট্টর নন। সবসময় পরিপাটি। অথচ কখনোই সাজগোজের বাহুল্য নেই। তিনি প্রত্যুতপন্নমতী। তাঁর ঝকঝকে হাসি, প্রাণখোলা কথাবার্তা সহজেই যে কাউকে আকৃষ্ট করে। 

ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি আচমকা রাজনীতিতে এসেছেন এমনটা বলা যাবে না। অ্যাক্রিডেন্টাল পলিটিশিয়ান তিনি নন। তবে দলীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রায়শই বলেন, দ্রুত রাজনীতির মই বেয়ে উঠছেন তিনি। তাঁকে ঈর্ষা করেন পছন্দ বা অপছন্দ করেন এমন অনেকেই বলেন, দীপু মনি পারদ। লয় নেই, ক্ষয় নেই। যেদিক থেকেই আলো পড়ুক একই রকম ঝকঝকে। 

কেমন? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগীরা বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার অল্পদিনের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর অন্তভূক্তি। প্রথমে দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৮ সালে দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য। এবং অতি দ্রত গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী। বিস্ময়কর ভাবে কিছুদিন পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও পদোন্নতি। তাবড়, গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পেছনে ফেলে অন্যতম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। যথারীতি ঈর্ষাকাতর আর সমালোচকদের টার্গেট ডা. দীপু মনি। ২০১৪’র সরকারে পুনরায় তাঁর অন্তর্ভক্ত না হওয়ায় কেমন যেন খুশির হাওয়া দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। কিন্তু কামব্যাক ২০১৮-তেই। 

এক নেতা, এক পদ- আওয়ামী লীগ যখন দল ও সরকারকে আলাদা করার এই নীতি নিল, এখানেও ব্যতিক্রম ডা. দীপু মনি। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী করা হয় তাঁকে। এই ব্যতিক্রমে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা কি খুশি হবেন! না-কি হয়েছেন?

নিন্দুকেরা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বারোটা আসলে বেজেছে নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রী থাকা অবস্থায়। বলা হয়, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে শুধু অনিয়ম নয়, নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রী থাকাকালে অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার ফলাফল ভালো দেখানো হতো। মন্ত্রী হিসেবে ডা. দীপু মনি কতটা সেই ধারাবাহিকতা বহন করেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতই দেবে। 

কিন্তু এ কথা তো সত্য যে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় অনেক কিছুর মতো লণ্ডভণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থার দায়ভার মোটেও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর নয়। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার দায় তো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে নিতেই হবে। শিক্ষাখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দূর করার দায়িত্ব তো মন্ত্রীরই। ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক সমাবেশ যেন আর না হয় এমন অনুশাসন কি আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আশা করতে পারি?

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর