প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিতে নির্মিত একটি ভাস্কর্য। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এটি স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। উত্তর আমেরিকায় বাঙালির একুশ উদযাপনের দীর্ঘ ইতিহাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ভাস্কর্য স্থাপনের মধ্য দিয়ে সূচিত হচ্ছে নতুন অধ্যায়ের, যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে শেষদিন (২৯ তারিখ) পর্যন্ত মাসব্যাপী ভাস্কর্যটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ম্যানহাটানের ১ম এভিনিউ ও ৪৭ স্ট্রিটের কর্নারে। পেছনে জাতিসংঘের সদর দপ্তর আর বিভিন্ন দেশের ওড়া সারি সারি পতাকা আর তার সামনে থাকছে একুশের এই ভাস্কর্য।
ভাস্কর্য স্থাপনের আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ। ভাস্কর্যটির নকশা তৈরি করেছেন অলিম্পিক গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত শিল্পী খুরশীদ সেলিম। আর ভাস্কর্যটি নির্মাণ করছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী মৃণাল হক।
মেয়র অফিসের কর্মকর্তা জেনিফার লেন্টাস জাস গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে ভাস্কর্য স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বজিৎ সাহা, নিনি ওয়াহেদ, ওবায়দুল্লাহ মামুন, আব্দুর রহিম বাদশা ও নাজিম আহমেদ।
গত বছরের শুরুতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী একুশের ভাস্কর্য স্থাপনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিটি অব নিউইয়র্ক পার্ক এন্ড রিক্রিয়েশন ডিপাটমেন্ট চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এক চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী এই ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করে। স্থান নির্ধারণ অনুষ্ঠান শেষে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দলটি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের সাথে সাক্ষাৎ করে একুশের ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি অবহিত করে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। এছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, কনসাল জেনারেল শামীম আহসানসহ আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিবিদ, ইউনেস্কো, জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলবে। থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত থাকবে সর্বসাধারণের জন্য।
জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাসব্যাপী এই ভাস্কর্যটি প্রদর্শনের ঘটনায় আমেরিকা অভিবাসী বাঙালীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এই সমগ্র অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। প্লাটিনাম স্পন্সর নিউইয়র্কের বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর ও অন্যতম সংস্কৃতি সেবী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
একুশের প্রথম প্রহরে শহীদদের প্রতি পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ বাংলাদেশ সময় রাত ১২.০১ মিনিটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একই সময়ে নিউইয়র্ক সময় ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১.০১ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ শুরু হবে।এসময় থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একুশের গ্রন্থমেলা। জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলনায়তনে একুশের নতুন গ্রন্থ নিয়ে অনুষ্ঠিত এই গ্রন্থমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হকসহ বিশিষ্ট লেখকরা। একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইগুলো এই মেলায় স্থান পাবে। এছাড়া প্রকাশিত হচ্ছে একুশ উপলক্ষে বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘বাঙালির চেতনা’।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা