নিরপরাধ অভিবাসীদের গ্রেফতার এবং বহিষ্কারের চলমান কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে ইউএস সিআইএস তথা অভিবাসন দফতরের সাথে বৈঠক করতে চান শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেসম্যানরা।
এ দাবিতে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটিক ককাসের চেয়ারম্যান যোসেফ ক্রাউলি এবং বাণিজ্য ও বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গ্রেস মেংসহ ২৯ কংগ্রেসম্যান যুক্ত স্বাক্ষরে একটি চিঠি দেন অভিবাসন দফতরের অভিভাবক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টজেন এম নিলসেন এবং ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর উপ-পরিচালক থমাস ডি হুম্যানকে।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোন সাড়া না দেয়ায় ২৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে নিউইয়র্কে অভিবাসন দফতরের সামনে বিক্ষোভ করলেন ৪ কংগ্রেসম্যানসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা।
এ সময় কংগ্রেসম্যান যোসেফ ক্রাউলি প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মা এবং ৩ স্ত্রীর দু’জনই অভিবাসী ছিলেন। তার মা-ও আমাদের অনেকের মায়ের মত গৃহকর্মী ছিলেন। সে সব ইতিহাস কীভাবে ভুলে যান ট্রাম্প। নিজের ধমনীতে অভিবাসীদের রক্ত প্রবাহিত হওয়া সত্বেও তিনি কীভাবে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নির্দয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন।’
ক্রাউলি অভিযোগ করেন, শিশুকালে মা-বাবার সাথে আগতদের মধ্যে এখনও যারা অভিবাসনের মর্যাদা পায়নি অর্থাৎ যাদেরকে ড্রিমার হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১২ সালে একটি আদেশ জারি করে এদেশে বসবাসের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ‘ড্যাকা’ (ডেফার্ড এ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড এ্যারাইভাল) কর্মসূচি গত সেপ্টেম্বরে বাতিল করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্চের ৫ তারিখের মধ্যে কংগ্রেসে ড্যাকা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিল পাশের জন্যে ট্রাম্প বারবার আহ্বান রাখছেন। অর্থাৎ তিনি নিজে সমস্যা সৃষ্টি করে এখন ডেমোক্র্যাটদের সহায়তা চাচ্ছেন ঐ সমস্যা সমাধানের জন্য। ‘ড্যাকার আওতায় বৈধতার জন্যে ৮ লাখ তরুণ-তরুণী আবেদন করলেও এই কর্মসূচির সুবিধা পাবার যোগ্যদের সংখ্যা ১৮ লাখের কাছাকাছি। বিরাট এই জনগোষ্ঠির ভাগ্যকে জিম্মি করে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্যে ২৫ বিলিয়ন ডলার শুধু চাচ্ছেন না, পারিবারিক কোটা সংকুচিত করার পাশাপাশি ডিভি লটারি বন্ধের বিল পাশের চাপ দেয়া হচ্ছে।’
কংগ্রেসওম্যান নিদিয়া ভ্যালেস্কুয়েজ এবং ইভেটি ডি ক্লার্ক এ সময় উত্তেজিত হয়ে আরো বলেন, ‘ট্রাম্পকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা কোনভাবেই পারিবারিক কোটা সংকৃচিত করার খায়েস পূরণ হতে দেব না। কারণ, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিবাসীদের স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে সক্ষম হচ্ছে।’
কংগ্রেসওম্যান ক্যারলিন ম্যালনি বলেন, ‘সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এহেন অ-আমেরিকান কর্মকান্ডকে রুখে দিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
কংগ্রেসম্যান ক্রাউলি বলেন, ‘ট্রাম্পকে রুখে দেয়া সম্ভব না হলে অবৈধভাবে বসবাসরতরাই শুধু নয়, যাদের গ্রীণকার্ড রয়েছে, তারাও রেহাই পাবেন না।’
ক্রাউলি বলেন, ‘গ্রেফতার, বহিষ্কারের ভয় দেখিয়ে আমেরিকানদের স্তব্দ করা যাবে না। মানুষ ক্রমান্বয়ে জেগে উঠছে। ’
ট্রাম্প প্রশাসনের অমানবিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের নেতা ছিলেন রবি রাগবির। তার গ্রীণকার্ড রয়েছে। এতদসত্বেও তাকে গত সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় দশক আগের একটি অপরাধের কারণে। ঐ অপরাধে তার শাস্তি হয়েছিল। একইভাবে মিশিগানের এক ডাক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ বছর আগের এক অপরাধের কারণে। ১০০ ডলারেরও কম মূল্যের কিছু জিনিস নষ্টের জন্যে অভিযুক্ত হয়ে হয়ে ডাক্তার আদালতে দোষ স্বীকারের মধ্য দিয়ে মুক্তিলাভ করেন। এখন সেই অপরাধে সেই ডাক্তারকে দেড় সপ্তাহ আগে গ্রেফতার করে পল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তারও গ্রীণকার্ড রয়েছে ৩৫ বছর যাবত।
‘এভাবেই অভিবাসীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটিয়ে ট্রাম্প তার আখের গোছাতে চাচ্ছেন, যা কখনোই সহ্য করা হবে না’-বলেন কংগ্রেসওম্যান ইভেটি ডি ক্লার্ক।
কংগ্রেসম্যান ক্রাউলি বলেছেন, ‘কোন ধরনের গুরুতর অপরাধ করেননি কিংবা সামাজিকভাবেও ভীতির কারণ নন-এমন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার অভিযান স্থগিতের অভিপ্রায়ে আমরা প্রতিনিধি পরিষদের একটি শুনানির আবেদন রেখেছি কয়েক সপ্তাহ আগে। এখন পর্যন্ত সে আবেদনের ব্যাপারে হাউজের স্পিকারের কোন দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এভাবেই আমেরিকার মূল্যবোধ আজ বিপন্ন হয়ে উঠেছে।’
হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক আমেরিকান ট্রাম্পের সমালোচনামূলক পোস্টার-প্লেকার্ড হাতে এই কর্মসূচিতে জড়ো হন। বাংলাদেশি-আমেরিকানদের প্রতিনিধিত্ব করেন ওসমান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যবর্তি নির্বাচনে ব্যালট যুদ্ধে ধরাশায়ী করতে হবে রিপাবলিকানদের। সেই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না।’
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন