জহিরুল ইসলাম শাহীন। ব্রিটেনের একটি টেলিভিশনে পোস্ট প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ১৪ বছর ধরে ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাস। এই ১৪ বছরে অনেকবার বাংলাদেশে গেলেও এই প্রথম পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছায় ৩ মাস আগে চার সদস্যের পরিবারের জন্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে টিকেট কিনেন। ৬ আগস্ট বাংলাদেশে ফ্লাইট করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র ডেঙ্গু আতঙ্কে তিনি বাংলাদেশে যাওয়া বাতিল করেছেন।
অফারের টিকেট কেনায় তিনি পুরো টাকাটাই গচ্ছা দিতে হয়েছে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়া উপলক্ষে নিজের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির জন্য যা কেনাকাটা করেছিলেন সেটাতো আছেই।
জহিরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, বিলেত প্রবাসী হওয়ার পর এই প্রথম ঈদের মধ্যে সামার হলিডে পড়ায় দেশে ঈদ উযযাপন করার পরিকল্পনা করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার ৩ এবং ১০ বছরের ছেলে দু'জনই কতো পরিকল্পনা করেছে দেশে এক মাস থেকে কি কি করবে সেসব নিয়ে! ওদেরও মন ভেঙে গেছে!
শুধু জহিরুল ইসলাম শাহীন নয়, ডেঙ্গু আতঙ্কে প্রবাসীরা ঈদে বাংলাদেশে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। এরমধ্যে ৬ আগস্ট স্বামী সন্তান নিয়ে দেশে বেড়াতে গিয়ে ইটালি প্রবাসী হাফসা লিপি নামে এক নারীর মৃত্যুতে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রবাসীদের মধ্যে।
রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশে ভ্রমণে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ওয়েবসাইটে গত শনিবার এ সতর্কতা জানানো হয়।
বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সারা বছরই ডেঙ্গু জ্বরের মতো মশাবাহিত রোগ দেখা দেয়। তবে এই মুহূর্তে দেশটিতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় মশার কামড় এড়িয়ে চলার জন্য ব্রিটিশ নাগরিকদের নির্দেশনা দেয়া হলো।’
ব্রিটিশ ফরেন অফিস থেকে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের নাগরিকদের সব সময় ভ্রমণ সংক্রান্ত উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের দেড় লাখ নাগরিক ভ্রমণ করে থাকে। সে কারণে সব সময় বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্কতা দেয়া তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।
তবে সিলেটে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকায় সিলেটের যাত্রীরা এখন পর্যন্ত কোন যাত্রা বাতিল করেননি বলে জানান ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যতম বড় ট্রাভেল এজেন্সী হিলসাইড ট্রাভেলস গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন খান।
বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের প্রবাসীরা চেষ্টা করছেন ঈদ এবং সামার হলিডের সময়ের দেশে ভ্রমণের টিকেট পরিবর্তনের। আর যারা রিস্ক নিয়ে দেশে যাচ্ছেন তারাও মশার উপদ্রুপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্প্রে, ক্রিম, ওষুধ কিনে যাচ্ছেন।
আগামী ১১ আগস্ট ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক সালেহ আহমেদ পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে। তিনি জানালেন বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তিনি প্রায় ১০ হাজার টাকার মশার উপদ্রব থেকে বাচার জন্য ওষুধ কিনেছেন।
হোয়াইট চ্যাপেল এলাকার একটি ফার্মেসির কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফাহিম জানালেন, অন্য বছরের তুলনায় এবারের সামার হলিডে উপলক্ষ্যে দেশে যাওয়া প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে মশা মারার বিভিন্ন ওষুধ কিনছেন।
বিডি প্রতিদিন/০৭ আগস্ট ২০১৯/আরাফাত