২২ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:২০

দেশে পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশন

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

দেশে পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশন

রেজ্যুলেশনের পক্ষে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

‘প্রাকৃতিক তন্তু উদ্ভিজ্জ ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার বিষয়ক একটি নতুন রেজ্যুলেশন গ্রহণ করল জাতিসংঘ। এর ফলে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাটের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি চাষিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের পথ সুগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

পলিথিনের বিকল্প হিসেবে চটের ব্যাগসহ নানা সামগ্রির বহুল প্রচলনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সুরক্ষার প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে এই বিলের গুরুত্ব অপরিসীম-যা বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুধাবন করাতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ। 

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে গত দশক থেকেই বাংলাদেশের পাটের তৈরি দ্রব্য-সামগ্রির বহুল প্রচলনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দু’বছর আগেও বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। সে আলোকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের সমন্বয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন একযোগে চেষ্টা চালাচ্ছিল এই রেজ্যুলেশন পাশের জন্যে। 

জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম সাধারণ পরিষদের ২য় কমিটিতে ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে রেজ্যুলেশনটি গৃহীত হয়। এর আগে বাংলাদেশ এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেজ্যুলেশনটি ২য় কমিটিতে উত্থাপন করে। দীর্ঘ প্রায় ৩ মাসের টানা নেগোসিয়েশনে পক্ষে-বিপক্ষের মতামতসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এই রেজ্যুলেশন গ্রহণের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। ভারত, চীন, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, মিশর, নাইজেরিয়াসহ ৬৮টি দেশ রেজ্যুলেশনটির কো-স্পন্সর ছিল।

এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম রেজ্যুশেলন যেখানে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে লাভজনক কৃষি পণ্য পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবতা তুলে ধরা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে প্রাথমিকভাবে রেজুলেশনটিতে পাট এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তু যেমন অ্যাবাকা, কয়ার, কেনাফ, সিসাল, হেম্প ও রামি এর ব্যবহার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে যা এতদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রায় অজানাই ছিল।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সর্বসম্মতিক্রমে রেজ্যুলেশনটি গ্রহণ করায় সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ধন্যবাদ জানান।

রেজুলেশনটি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ কিভাবে উপকৃত হবে তা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, “রেজুলেশনটি পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও সুনিপুন ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ এর পথ পাকা করল। এর ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৈশ্বিক বাজারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের পাটচাষি ও পাট ব্যবসায়ীদের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে”।

স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, এই রেজ্যুলেশন প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের সুবিধা আর কৃত্রিম তন্তু যেমন প্লাস্টিক ব্যবহারের অসুবিধা তুলে ধরার মাধ্যমে পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখবে। এতে সদস্য দেশসমূহকে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিষয়ে নতুন নতুন আইন, নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

দ্বিতীয় কমিটিতে গৃহীত এই রেজ্যুলেশন ডিসেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। এখন থেকে দ্বিবার্ষিকভাবে এ রেজুলেশনটি জাতিসংঘে আলোচিত হবে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর