বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে প্রাচীন বাংলা পত্রিকা সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন সাংবাদিক নবাব উদ্দিন। তিনি ৩০ বছর ধরে জনমতের সাথে ছিলেন এবং ২২ বছর ধরে জনমতের সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
২ ফেব্রুয়ারি পূর্ব লন্ডনের একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিনের বাংলা মিডিয়ায় কর্মময় জীবন সম্পর্কে ৭১জন লেখকের লেখা সাংবাদিক সাঈম চৌধুরী সম্পাদিত বই দীপ্ত পথচলা, নবাব উদ্দিনের প্রবন্ধ নিবন্ধ বই যেতে যেতে পথে এবং এ রেসিস্ট মার্ডার অব আলতাব আলী বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজনে সমাপনী বক্তব্যে নবাব উদ্দিন জনমত পত্রিকার সাথে তার ৩০ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক চুকিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন।
বই তিনটির মোড়ক উন্মোচন করেন লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ও কমিউনিটির বিভিন্ন সেক্টরের ২১ জন সফল মানুষ।
সাংবাদিক সাঈম চৌধুরীর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, বেসরকারি দাতব্য সংস্থা আপাসেন এর প্রধান নির্বাহী মাহমুদ হাসান এমবিই, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ ওবিই, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, চ্যানেল এস টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা মাহী ফেরদৌস জলীল।
প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে অনেক নবাব রয়েছে, কিন্তু আমাদের নবাব হচ্ছেন জনগণের নবাব! সে জীবনে যা করতে চেয়েছে তাই করেছে। এক জীবনে নাটক, খেলাধূলা, জনমতের মতো পত্রিকার সম্পাদনা, চ্যারিটির কাজ, বাচ্চাদের মানুষ করা সবই সে সফলতার সাথে করেছে।
তিনি আরো বলেন, জনমত পত্রিকায় স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন আমাকে। তিনি না থাকলে জনমতে আমার লেখা হবে কি না জানি না।
প্রখ্যাত এই লেখক বলেন, মসজিদে সে নামাজ পড়ে এবং চাঁদা তুলে এজন্য অনেকেই আমার কাছে বলে সে জামায়াতি হয়ে গেছে। কিন্তু এটা আমি বিশ্বাস করি না। যে নাটক করে, বাংলা সংস্কৃতি ভালোবাসে সে কোনদিন জামায়াত করতে পারে না। মুসলমান হিসাবে নামাজ আমরা সবাই পড়ি।
মাহমুদ হাসান এমবিই নবাব উদ্দিনের সাথে ৪ দশকের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, নবাব উদ্দিনকে আমি সেই ৪০ বছর আগে যেমন প্রাণ চাঞ্চল্য ভরপুর দেখেছি আজো সে তেমনি আছে। নবাবের কর্মময় জীবন নবাবকে বাঁচিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন।
তিনি বলেন, নবাব উদ্দিন কিভাবে এই ৩০ বছর জনমতকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেটা আমি দেখেছি, এক সময় জনমত পত্রিকার অফিস ব্যাংক লোনের জন্য চলে গেলে সে তার বাসা থেকে পত্রিকা প্রকাশ করতো। তার স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় জনমত টাইপ করতেন। এভাবে সংকট কাটিয়ে জনমত আজকে শীর্ষ পত্রিকা।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, নবাব উদ্দিন মানুষের কতো কাছাকাছি সেটা আজকের অনুষ্ঠানের উপস্থিতিই বলে দেয়। একজন ব্যক্তির ডাকে এতো মানুষের উপস্থিতি বিরল।
তিনি আরো বলেন, প্রেসক্লাবের নির্বাচন আসলে আমাদের প্রতিযোগিতা হয়, প্রেসক্লাবে উনার সাথে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের মতানৈক্য হয়েছে, কিন্তু সেই সম্পর্কে কখনো ফাটল হয়নি। ব্যক্তি নবাব উদ্দিন সেই প্রশংসার দাবিদার।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন ওবিই বলেন, নবাব ভাই আমার কাছে একজন স্টার! তার মতো একজন ভালো বন্ধু এবং মধ্যস্থতাকারী পাওয়া আসলেই দুস্কর। আমার ব্যক্তিগত কয়েকটি সমস্যা সমাধানে নবাব ভাইয়ের যে ভূমিকা সেই কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আজকে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ নিয়েছি।
চ্যানেল এস টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা মাহী ফেরদৌস জলীল বলেন, নবাব উদ্দিন হচ্ছেন বিলেতের নবাব। তিনি যা করেছেন তা এই কমিউনিটির জন্য, বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে করেছেন। উনার মতো মানুষ সম্পাদক বলেই কমিউনিটিতে এখনো বাংলা পত্রিকার অবস্থান আছে। নবাব উদ্দিন তার কর্মে বেঁচে থাকবেন ৩০০ বছর। তার উত্তরসুরীরা তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে নবাব উদ্দিন জনমতের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য ততকালীন সম্পাদক, বাংলা টিভির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সামাদুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নবাব উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে জন্ম নেয়া জনমতের যে আদর্শ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে কাজ করার, সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২২ বছর সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে গেছেন।
এছাড়া তিনি বলেন, গত ২২ বছর সম্পাদকের জীবন সহজ ছিলোনা, অনেক মামলা, হামলা, হুমকী মোকাবেলা করে কমিউনিটির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ায় জনমত সারা ব্রিটেনব্যাপী ঈর্ষণীয় সাফল্য পায়, অর্জন করে কমিউনিটির অন্যতম মুখপাত্র হওয়ার গৌরব।
নবাব উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ এই সময়ে পত্রিকা চালাতে গিয়ে, কমিউনিটির স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেক সময় অনেক মানুষকে হয়তো কষ্ট দিয়েছি, তারা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
তার কর্মময় জীবনের উপর সাঈম চৌধুরী সম্পাদিত দীপ্ত পথচলা’র ৭১ জন লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে তিন বই থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠ করেন আবৃত্তিকার, সংবাদ পাঠক তৌহিদ শাকিল, শহিদুল ইসলাম সাগর, সাংবাদিক বুলবুল হাসান। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী মুনীরা পারভীন, নবাব উদ্দিনের রচিত নাটক থেকে পাঠ করেন উপস্থাপিকা উর্মি মাজহার ও আবৃত্তিশিল্পী সালাউদ্দিন শাহীন। এছাড়া অনুষ্ঠানে নবাব উদ্দিনের কর্মমময় জীবনের উপর আব্দুল হান্নান নির্মিত তথ্যচিত্র দীপ্ত পথচলা এবং ইস্ট হ্যান্ডস চ্যারিটি সংস্থার উপর দুটি পৃথক তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন