গত সপ্তাহে আরো ৩০ লাখ আমেরিকান বেকার ভাতার আবেদন করায় মধ্য মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত বেকার হওয়া আমেরিকানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ কোটি ৬৫ লাখ। মার্কিন শ্রম দফতর এ তথ্য জানিয়েছে। করোনা ভাইরাসে ক্ষত-বিক্ষত আমেরিকায় স্বল্প ও মাঝারি আয়ের কর্মজীবীরা এখন মহাসংকটে পড়েছে বলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সর্বশেষ এক জরিপে তা উদঘাটিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ জরিপ ফলাফলে দেখা গেছে, বার্ষিক ৪০ হাজার ডলারের কম মজুরির কর্মচারির ৪০% ১৮ মার্চের পরই বেকার হয়ে পড়েছেন। আর যাদের বার্ষিক বেতন ৪০ হাজার থেকে এক লাখ ডলারের মধ্যে তাদের ১৯% এবং এক লাখ ডলারের অধিক বেতনের কর্মকর্তার ১৩% বেকার হয়েছেন। অবশিষ্ট কর্মচারি-কর্মকর্তারা বাসায় বসে অথবা জরুরী প্রয়োজনের অফিস-সংস্থা-ব্যবসা হওয়ায় তারা পূর্ণ বেতন পাচ্ছেন এবং এ শ্রেণির ৮৫% তাদের বাসা ভাড়া, ফোন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বিলসহ মর্টগেজ পরিশোধেও কোন সংকটে নেই। আর যাদের কর্মণ্টিা কমানো হয়েছে তাদের পক্ষে মাসিক ব্যয়-নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও জরিপে উদঘাটিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া ৩ কোটি ৬৫ লাখের পরিবারের সদস্যরাও নাজুক অবস্থায় নিপতিত হয়েছেন। এসব পরিবারের শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীরা পুষ্টিকর খাদ্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবসময়ই এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করা হয় এবং তা ব্যাংকের পত্রিকায় প্রকাশ পায়। সর্বশেষ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের জরিপে এক হাজার কর্মজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, মার্চের ১ তারিখের পরবর্তী সময়কে তারা কীভাবে দেখেছেন। সকলেই গভীর এক হতাশার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি তাদেরকে ভয়ংকর এক অবস্থার মধ্যে নিপতিত করেছে বলে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে দ্রুত উদ্ধার হতে না পারলে কঠিন এক সংকটে তথা দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, করোনা স্টিমুলাসের ৪টি বিল কংগ্রেসে পাশের পর বেকার ভাতা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে পাবার কথা। সে অনুযায়ী সকলেই আবেদন করলেও অধিকাংশই তা পাচ্ছেন না। টেকনিক্যাল সমস্যাসহ প্রসেসিংয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার অজুহাত দেখানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারপার্সন জেরোমি এইচ পাওয়েল গভীর উদ্বেগের সাথে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কঠিন এক অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়েছে যার কোন উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত নেই। এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে কংগ্রেস এবং হোয়াইট হাউজকে সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন পাওয়েল।
ইতিমধ্যেই ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয়ের করোনা স্টিমাল বিলও সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থায় ন্যূনতম প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে তালা ঝুলার পাশাপাশি অফিস-আদালত বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। একইসাথে অর্থনৈতিক সেক্টরেও এসেছে নাজুক অবস্থা।
এদিকে, স্থবির হয়ে পড়া আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার অভিপ্রায়ে ডেমক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে আরো তিন ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা রিলিফ বিল উত্থাপন করা হয়েছে। তবে এর বিরোধিতা করছে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট। এরফলে অর্থ সংকটে পড়া লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, গত মার্চে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা রিলিফ বিলের পরিপ্রেক্ষিতে ট্যাক্স প্রদানকারিরা মাথাপিছু ১২০০ ডলার করে পেয়েছেন। সে সব পরিবারের শিশু সদস্যরা পেয়েছে মাথাপিছু ৫০০ ডলার করে। নতুন এ বিলে মাথাপিছু ১২০০ ডলার অটুট রাখা হলেও শিশুদের জন্যে এক হাজার ডলার করার প্রস্তাব রয়েছে। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বর পর্যন্ত সাপ্তাহিক ৬০০ ডলারের বেকার ভাতা অব্যাহত রাখার প্রস্তাবও রয়েছে। শুধু তাই নয়, এপ্রিল থেকে করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাসিক বাড়ি ভাড়া এবং বাড়ির মালিকদের ঋণের মাসিক কিস্তি মওকুফের কথাও রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন