ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রহমত আলীর হত্যার রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। এদিকে রহমত আলী হত্যা মামলার ৮নং স্বাক্ষী সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর চৌধুরীই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি নিহতের পরিবারের। থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে আলমগীর পালিয়েছে বলে মামলার বাদী মহব্বত আলী দাবি করেন। যদিও পুলিশ বলছে, আলমগীর মামলার গুরত্বপূর্ণ স্বাক্ষী। পুলিশ পাহারায় সে পালিয়ে যাওয়ার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান বলেন, আলমগীর চৌধুরী মামলার একজন স্বাক্ষী। এলাকাকার লোকজন হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততার সন্দেহে তাকে মারধর করেছে। আহত অবস্থায় তাকে নাসিরনগর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছে। পরে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠালে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়। সেখান থেকে সে কি কারণে পালিয়ে গেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ মামলায় কোন নিরাপরাধ লোক হয়রানির শিকার হবে না।
গত ২০ মে বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে রহমত আলী নামে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বুড়িশ্বর গ্রামের চান পাড়ার আলমগীর চৌধুরী বাড়ির পুকুর পাড় থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার রহমত আলী বুড়িশ্বর গ্রামের ফালান মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. মহব্বত আলী বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মামলার স্বাক্ষী আলমগীর ও আসামি আলী আজম চৌধুরীর মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মামলাও চলমান আছে। মামলার স্বাক্ষী আলমগীরের সাথে চলাফেরা করত নিহত রহমত আলী। সে কারণে আলমগীরের ক্ষতি করতে পারছিলো না আলী আজম চৌধুরীর পক্ষের লোকেরা। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ১নং আসামি মো. আলী আজম চৌধুরী ও ২২ নম্বর আসামি সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে ঘটনার দিন গত ২০ মে রাত ১১টার সময় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
মামলার বাদী মো. মহব্বত আলী দাবি করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার সময় আমারা সংবাদ পাই আমার ভাইকে আলমগীর মেম্বারের বাড়ির পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই লাশ উদ্ধার করে। পরের দিন সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠানো হয়। এর পর লাশ দাফন করে রাতে থানায় আসলে আলমগীর মেম্বার মামলা লেখিয়ে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলে। পরে জানতে পারলাম আমার ভাইয়ের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হলো আলমগীর মেম্বার। কি কারণে আলমগীর মেম্বারকে সন্দেহ হল জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, আলমগীর মেম্বার ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি আলী আজম চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ ছিলো। তাদের পারিবারিক বিরোধের জেরেই আমার ভাইকে হত্যা করিয়েছে আলমগীর মেম্বার।
মামলার আসামি সারোয়ার আলম জানান, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কোনভাবেই জড়িত না। ঘটনার দিন আমি ঢাকার সুপ্রিম কোর্টে ছিলাম। আমি গত ৫ বছর ধরে বাড়িতে যাই না। মামলার অধিকাংশ আসামি দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরি করে। তিনি আরো বলেন, আলমগীর মেম্বারের সাথে আমাদের পারিবারিক বিরোধ আছে। তাই আমাদের ফাঁসাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আলমগীর মেম্বারকে আইনের আওতায় আনলেই হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল