২ জুলাই, ২০২২ ১০:১৩

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জাতিসংঘে ৫ দফা কর্মসূচি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জাতিসংঘে ৫ দফা কর্মসূচি

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ৩০ জুন ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ অর্জন সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে চলতি সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ শহীদ উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপনকালে বলেন, প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ মানুষের প্রাণ ঝরছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এর খেসারত দিতে হচ্ছে কোন কোন দেশকে তার জাতীয় প্রবৃদ্ধির ৩% পর্যন্ত। আর যারা মারা যাচ্ছে তার অধিকাংশই হচ্ছে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়েসী। অর্থাৎ কর্মোদ্দমী বিরাট জনগোষ্ঠি অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ থেকে সমগ্র বিশ্বকে রক্ষার্থে ৫ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ শহীদ। 

এগুলো হচ্ছে, ১. সড়ক-মহাসড়কে কোন মৃত্যু গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিরাপদ সড়কের প্রসঙ্গটি স্বাস্থ্য অধিকারের সর্বজনীন চ্যাপ্টারের নীচে পড়েছে। যেটি হওয়া উচিত ছিল সর্বাগ্রে, ২. বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হ্রাস এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা ছিল, সেটিকে সামনে এনে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে ৩. জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা কায়েমের অভিপ্রায়ে, সেই বৈঠকের সুপারিশ বাস্তবায়িত করতে রাষ্ট্রসমূহকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে, ৪. নিরাপদ সড়কের ইস্যুটিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি-নির্দ্ধারকদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত করতে হবে এবং ৫. সর্বস্তরের কর্মকর্তাগণকে দরদি ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ পরিকল্পনা গ্রহণকারি থেকে প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ-সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার অভিপ্রায়ে। এই মনোভাবকে সাফল্যমণ্ডিত করতে প্রশাসনকে সহযোগীর ভ’মিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। 

আব্দুল্লাহ শহীদ বলেন, এই বৈঠক হতে পারে উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অন্যতম অবলম্বন। শুধু কথার ফুলঝুরি ফুটালে চলবে না, সকলকে আন্তরিকতার সাথে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে বাধ্য। 

এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্তোনিয়ো গুতিরেজ সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন, নিম্নমানের অবকাঠামো, অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি, এবং দেশের অভ্যন্তরে ও এক দেশের সাথে আরেক দেশের জীবনমানে বৈষম্য বিরাজ করায় সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। একইসাথে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হওয়ায় উন্নয়ন পরিক্রমা ব্যাহত হচ্ছে। 

মহাসচিব উল্লেখ করেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত পরিবারকে নাজুক অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ায় কিংবা স্থায়ীভাবে কাজে অক্ষম হওয়ায়। অনেককে বাকিটা জীবন চিকিৎসাধীন থাকতে হওয়ায় গোটা পরিবারের স্থায়ী একটি সমস্যায় পরিণত হন। 

মহাসচিব সরাসরি সকলের প্রতি আহ্বান রাখেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্যে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা স্লোগানকে রাজনৈতিক ঘোষণা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়নের পথে বড় ধরনের বাধা হওয়ায় আমাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট হতে হবে নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা করতে। মহাসচিব এ লক্ষ্যে অতিরিক্ত অর্থ মঞ্জুরির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন টেকসই এবং নিরাপদ অবকাঠামোর জন্যে। অর্থাৎ দুর্বল মানের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে থাকলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। স্বল্প এবং মাঝারি আয়ের দেশসমূহে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে মঞ্জুরি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর