২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৩০
আজ বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্টরা

কাব্য সাহা


পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্টরা

প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য- "ফার্মেসি: আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সর্বদা বিশ্বস্ত"। প্রতিবছর এই দিনে ফার্মাসিস্টরা দেশে-বিদেশে যে মানসম্মত ওষুধ তৈরির মাধ্যমে স্বাস্থসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকে পালন করে যাচ্ছেন, এই মহান পেশার মানুষদের উৎসাহ প্রদানে এবং এই পেশা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ২০১০ সাল থেকে সারাবিশ্বে ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

ফার্মাসিস্ট নিয়ে বলতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় ফার্মাসিস্টদের পরিচিতি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা ফার্মাসিস্ট মানেই একজন ওষুধ বিক্রেতা। কিন্তু আসলেই কী তাই? জেনে নেওয়া যাক এই বিষয় সম্পর্কিত কিছু কথা। মূলত একজন ওষুধ বিক্রেতা হলেন ফার্মেসি টেকনিশিয়ান, যেখানে ৩ মাসের কোর্স করে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান হিসাবে সার্টিফিকেট পান। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে সেই চিত্রটাও ভিন্ন।

একজন সাধারণ ছাত্র বা অন্য পেশায় কাজ করা মানুষ ৩-৪ মাসের ওষুধের দোকানে কাজ শিখে অর্থাৎ ওষুধ বিক্রির কাজ শিখে হয়ে যাচ্ছে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান। আবার কোনো কোনো ওষুধের দোকানে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চলে নানাবিধ চিকিৎসার কাজ। আবার বিক্রেতাদের কেউ কেউ নিজেই রোগের কথা শুনে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা ছাড়াই দিচ্ছেন নানা রোগের ওষুধ, রোগীরাও সাদরে সেই সেবা গ্রহণ করে চলেছেন। দুঃখজনক হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এরাই হলেন ফার্মাসিস্ট। তারা ৩-৪ মাসের ঔষধ বিক্রির প্রাকটিক্যাল ধারণা থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে বনে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট হিসাবে!

আচ্ছা এইবার না হয় এক অন্যরকম ফার্মাসিস্টদের গল্প শোনা যাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির সাবজেক্ট তথা ফার্মেসি বিভাগের অবস্থান বরাবরই অনন্য। যেখানে ভর্তি হয়ে একজন শিক্ষার্থী প্রথমেই শপথ করেন সৎ এবং আদর্শ মনন নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করার। কারণ, ৪ বছর কোর্স শেষ করে একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের পরিপূর্ণতার পর তার হাতেই গোটা জাতির জীবন-মরণ নির্ভর করে। এর ব্যাখ্যায় না গিয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কথায় আছে 'একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যাবে, কিন্তু একজন ফার্মাসিস্ট ভুল করলে জাতি বড় একটি সংখ্যা হারাবে।' একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধ প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে, ওষুধের এর গুণগতমান নির্ধারণ, ওষুধ নির্ধারণ, ডোজ নির্ধারণ কিংবা ওষুধের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে থাকেন। একজন ফার্মাসিস্টের হাতেই পরোক্ষভাবে তৈরি হয় হাজারো মানুষের সুস্থতা এবং সুন্দর জীবনের গল্প। তবে একজন ফার্মাসিস্টের গল্প আমরা ক'জন জানি? জানলেই বা সেইটা কতটুকু?

একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট দেশের জন্য কাজ করতে বদ্ধপরিকর। সূর্য আকাশে ওঠার আগেই যেই মানুষটি নিজেকে ফার্মাসিউটিক্যালসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন, তিনিই একজন ফার্মাসিস্ট। এমনকি শীতের সকালে  কুয়াশার চাদর ঠেলে নির্দিষ্ট সময়ে ফার্মাসিউটিক্যালসে পৌঁছে যাওয়া মানুষটি একজন ফার্মাসিস্ট। নিজেকে প্রোটেক্ট করা থেকে শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় তার জীবনযুদ্ধ। দীর্ঘ সময় কাজ শেষ করে, ওভার টাইমের জন্য কখনো কখনো সুযোগ হয় না সূর্য দেখার, তবুও লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জন্য নিজের সবটুকু শ্রম দিয়ে অসুস্থ মানুষের নানা হাসির গল্প তৈরি করা। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে একজন ফার্মাসিস্টের এমন জীবনের অসংখ্য বাস্তবতা। ওষুধে জীবন দেওয়া ফার্মাসিস্টরা শুধু তৈরি করেই বসে নেই, তারা দূর্গম থেকেও দূর্গম প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধের সেবা। তবুও তাদের সন্মান পরিপূর্ণতা পায় না। পায় না একজন ফার্মাসিস্ট যথাযথ মূল্যায়ন।

একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রধান দায়িত্ব ওষুধ প্রস্তুতকরণ। তবে একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ব্যপ্তি নিশ্চয়ই এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ফার্মেসির বাকি সেক্টরগুলোতে ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বিষয় আলোকপাত করা যাক। ফার্মাসিস্টদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হসপিটাল ফার্মেসি পরিচালনা করা। রোগী অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য আসবে, চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রোগ বিবেচনা করে ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ দিবেন। অন্যথায় কোন ডোজের ওষুধ রোগীর জন্য প্রযোজ্য, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে তা নিরূপণ করা কঠিন। স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও টেকনোলজিস্টের সমন্বয়ে রোগীর চিকিৎসা হওয়াটা সঠিক পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসক, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট দ্বারা চিকিৎসা সেবা চললেও নেই ফার্মাসিস্টদের সাথে সমন্বয়। গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা একপ্রকার অবহেলিত এক্ষেত্রে। ওষুধের ডোজ কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষয়ে বিস্তর ধারণার অভাবে একজন রোগীর নানা রকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে। বর্তামান চিকিৎসা সেবায় চিকিৎসকের পর নার্স দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্যই একজন নার্সের পক্ষে ওষুধের বিষদ নিরূপণ কখনো সম্ভব নয় কিংবা হবার কথাও নয়। সুতরাং ওষুধের মান বিবেচনার ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্ট এর বিকল্প ভাবাই যায় না। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে দেশে হসপিটাল ফার্মেসিতে 'এ' গ্রেড ফার্মাসিস্ট নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
ই-মেইলঃ [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর