সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাজ কম কথা বেশি

ইকবাল খন্দকার

কাজ কম কথা বেশি

কার্টুন : আসিফুর রহমান, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা, কিন্তু অবশেষে ঘোড়ার আণ্ডা। নাহ্, এমনটা কেউই চায় না। কিন্তু না চাইলে কী হবে, এমন ঘটনা তো অহরহই কেউ না কেউ ঘটাচ্ছেন। অতঃপর হাসির খোরাক হচ্ছেন। সম্প্রতি  তরতাজা হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট খেলুড়ে দল। কথা ছিল, অস্ট্রেলিয়াকে নাকি দাঁড়াতেই দেবে না। ৪-০-তে হারানোর প্রত্যয়, স্বপ্ন ও বিশ্বাস নিয়ে তাদের চলছিল গলাবাজি। ফলাও করেছে ওদের মিডিয়া। কিন্তু খেলার ফলাফল প্রকাশের পর তাদের গলা আর গলার জায়গায় নেই। গলা গলার জায়গায় না থাকায় কোনো আওয়াজও নেই। এই জন্যই ‘কবি’ বলেছেন— খালি কলস বাজে বেশি। ছাত্রজীবনে আমার এক বন্ধু ছিল। সে কথাবার্তা একটু বেশি বলত। হ্যাঁ, কেউ কেউ কথা একটু বেশি বলতেই পারে। এটা বড় কোনো সমস্যা না। সমস্যা তখনই হয়, যখন কথাবার্তার মধ্যে চাপাবাজিটা মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমার এই বন্ধুর ছিল চাপাবাজির স্বভাব। একদিন সে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বলল, আজকের পরীক্ষায় যদি একশতে একশ নাও পাই, নব্বই অবশ্যই পাব। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, কোনো পরীক্ষায়ই সে গড়ে ১৫ নম্বরের বেশি পায়নি। তাকে কয়েকজন মিলে ধরলাম। জিজ্ঞেস করলাম পরীক্ষার পর কেন সে চাপাবাজিটা করেছিল। সে বলল, আমি যদি সত্যি সত্যি নব্বই পেয়ে যেতাম, তাহলে যে এখন ফার্স্ট হয়েছে, তার জন্য ফার্স্ট হওয়া কঠিন হয়ে যেত না? আমি কীভাবে আমার ক্লাসের একটা ছেলের ক্ষতি করি বল! তোরা যেমন আমার বন্ধু, সেও তো আমার বন্ধু, তাই না?  সে যাক, পরবর্তী ঘটনায় আসি। আমার এক চাচাত ভাই একবার ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলায় নামল। খেলায় নামার আগে সে সবাইকে বেশ জোর গলায় বলল, আজকে প্রতিপক্ষের খবর আছে। আমি রানের বন্যা বইয়ে দেব। কিন্তু খেলায় নামার পর দেখা গেল সে শূন্য রানে আউট হয়ে বসে আছে। তাকে পাকড়াও করা হলো। জিজ্ঞেস করা হলো, খেলার ফলাফল এমন উল্টো হওয়ার কারণ? সে বলল, আমি ইচ্ছা করেই বলে জোরে বাড়ি দিইনি। জোরে বাড়ি দিলে যদি বল মাঠের বাইরে চলে যায় আর দর্শকের গায়ে গিয়ে লাগে, তাহলে বিপদ না? আমি তো দর্শকের কোনো ক্ষতি করতে পারি না। আমার এক প্রতিবেশী প্রায়ই বলেন তার বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি শুনেও না শোনার ভান করি। কিন্তু একদিন তিনি এমন শক্ত করে ধরলেন, আর ‘না’ বলতে পারলাম না। রওনা হলাম তার বাসার দিকে।  হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, আপনি কী খেতে চান বলেন। পাঁচ পদের তরকারি রান্না করেছে আপনার ভাবী। খাবেন কত! খেতে খেতে পেট ফেটে যাবে। বাসায় ঢুকলাম। খেতে বসলাম টেবিলে। কিন্তু কাঁচকি মাছের ভাজি ছাড়া আর কিছুই জুটল না। আমি কাঁচকি মাছের মাথা এবং লাজ-শরমের মাথা খেয়ে বললাম, তখন বললেন পাঁচ পদের তরকারি নাকি রান্না করা হয়েছে। এখন শুধু কাঁচকি মাছ যে? প্রতিবেশী বললেন, আপনি হয়তো খেয়াল করেননি। কাঁচকি মাছের মধ্যেই নানান কিসিমের মাছ মিশ্রিত আছে। যেমন ছোট ছোট চিংড়ি, পুঁটি, মলা ইত্যাদি। তাহলে পাঁচ পদের মাছ আর বাকি থাকল কোথায়? আমার এক ছোট ভাই বলল, আমি যাকে ভালোবাসি, আজ আমি আপনাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। আপনি তার আচার-আচরণ দেখলেই বুঝবেন সে আমাকে কত বেশি ভালোবাসে। চলেন। গেলাম। কথাবার্তার একপর্যায়ে মেয়েটা ছোট ভাইয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় মারল। আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা কী হলো? ছোট ভাই বলল, আসলে আমি সব সময় তার হাত ধরতে চাই তো। তাই সে আমার গায়ে হাতের একটা ছাপ বসিয়ে দিল। কত বুদ্ধিমান মেয়ে দেখেছেন!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর