সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যানজটেই আছি

সংসার জীবনের শুরুর দিকে তোর ভাবি আমার সঙ্গে ঝগড়া করে রোজ রোজ জিতে যেত, কেন জিতে যেত? কারণ, আমার ঝগড়ার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। প্র্যাকটিস ছিল না। কিন্তু আজকাল আর জেতে না। কারণ, আমার এখন ঝগড়ার প্র্যাকটিস আছে...

ইকবাল খন্দকার

যানজটেই আছি

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বন্ধু বলল, আগেকার দিন আর বর্তমান সময়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আগেকার দিনে তারকাদের যদি প্রশ্ন করা হতো, অবসরে আপনি কী করেন? তাহলে একেকজন একেক উত্তর দিত। কেউ বলত বই পড়ি, কেউ বলত টিভি দেখি, কেউ বলত খেলাধুলা করি। আর এখন যদি জিজ্ঞাসা করেন অবসর সময়ে আপনি কী করেন, দেখবেন সবাই একযোগে উত্তর দেবে, অবসরে আমি জ্যাম উপভোগ করি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, জ্যামটা কি মানুষ আদৌ অবসরে উপভোগ করে? জি, অবসরেই উপভোগ করে। অথবা যখন উপভোগ করে তখন মানুষ অবসরই থাকে। রাস্তায় জ্যাম লাগলে হাত-পা গুটিয়ে বসেই থাকতে হয়। ইচ্ছা করলেই কাজকর্ম করা যায় না। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, উড়াল সেতু দিয়ে ঢাকা শহর ভরে ফেলা হলো। উদ্দেশ্য, জ্যাম কমানো। কিন্তু কমল না তো কমলই না, আরও মনে হয় বেড়েছে। তাহলে উড়াল সেতু বানিয়ে লাভটা হলো কী? পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, বিশাল লাভ হয়েছে। আমি একজন ইউটিউবার। আমার অনেক খরচ কমে গেছে। কারণ, আজকাল আমি বুদ্ধি করে উড়াল সেতুগুলোকে কাজে লাগাচ্ছি। ভদ্রলোকের কথায় প্রতিবেশী তো অবাক হলেনই, আমি নিজেও অবাক হলাম। তাই অনুরোধ করলাম উনি যা বলেছেন বা বলতে চাচ্ছেন, তা যেন বুঝিয়ে বলেন। এবার সেই ইউটিউবার ভদ্রলোক বললেন, বুঝিয়ে বলার আসলে কিছু নেই। বললামই তো, আমি এজন ইউটিউবার। আগে উপর থেকে নিচের দিকের কোনো দৃশ্য ধারণ করতে হলে আমাকে ড্রোন ব্যবহার করতে হতো। জানেনই তো, ড্রোনের ভাড়া ম্যালা। আর এখন ড্রোন ব্যবহার করতে হয় না। উড়াল সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে নরমাল ক্যামেরা দিয়েই শুট করে ফেলি। আমার ভক্তরা মনে করে শটগুলো বুঝি ড্রোনের। কত লাভ না? ওহ ভালো কথা, উড়াল সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে নিচের জ্যামে আটকে থাকা গাড়ির দৃশ্যটা যখন শুট করি না, তখন মনে হয় আমি দেশে নাই। কই জানি চইলা গেছি। বোঝেন এইবার, কত মনোরম সিনারি! পাশে থাকা আরেক লোক কথা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘বৃষ্টি-বাদলার দিনে এই উড়াল সড়কের নিচে আশ্রয় নেই। আপনার কোনো আইডিয়া আছে কত উপকার হয়?’

আমার এক ছোটভাই বলল, যানজট যত বাড়ে, ব্যাগের ওজনও তত বাড়ে। কী যে করি! আমি বললাম, কোন ব্যাগের ওজন? মানিব্যাগের কি? মানিব্যাগের ওজন বাড়লে তো ভালোই। ছোটভাই বিরক্ত হয়ে বলল, ধুর ভাই, মজা লইয়েন না তো! এমনিতেই বহুত পেরেশানির মধ্যে আছি। মরার জ্যাম! আমি বললাম, পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে না বললে মজা তো নেবই। ছোটভাই বলল, বুঝিয়ে বলার মুড আসলে নেই। তবু বলি। আগে যখন কিছুটা কম জ্যাম ছিল, তখন ব্যাগে করে অফিসের কিছু কাগজপত্র নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন যেহেতু রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়, এখন আলাদা একটা শার্টও নিয়ে বের হই। যেহেতু গায়ের ঘামে ভেজা শার্টটা নিয়ে অফিসে ঢোকা যাবে না। যাই হোক, শুধু শার্ট নিয়ে বের হলে ব্যাগের ওজন বাড়ত না। যেহেতু বাসে ঠেলাঠেলি হয়, যেহেতু এই ঠেলাঠেলিতে ব্যাগে থাকা শার্টের ভাঁজ ভেঙে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তাই আজকাল ব্যাগে ইস্ত্রিও রাখি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ব্যাগের ওজন কেন বাড়ে। আমি বললাম, তাও ভালো, শুধু ইস্ত্রি রাখিস। কবে না আবার কাপড় আয়রন করে দেওয়ার জন্য ইস্ত্রির সঙ্গে স্ত্রীও নিয়ে যাস। আমার এক বড়ভাই বললেন, যানজট বলিস আর জ্যামই বলিস, জিনিসটা কিন্তু আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এখন হঠাৎ করে যদি জ্যাম না থাকে, তাহলে আমরা ভালোই ফ্যাসাদে পড়ে যাব। আমি বললাম, কী রকম? বড়ভাই বললেন, কী রকম আবার? এই যে সংসারজীবনের শুরুর দিকে তোর ভাবি আমার সঙ্গে ঝগড়া করে রোজ রোজ জিতে যেত, কেন জিতে যেত? কারণ, আমার ঝগড়ার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। প্র্যাকটিস ছিল না। কিন্তু আজকাল আর জেতে না। কেন জেতে না? কারণ, আমার এখন ঝগড়ার প্র্যাকটিস আছে। আমি রোজ পাবলিক বাসে করে অফিসে যাই। জ্যামের কারণে দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে থাকি। হকারের সঙ্গে কাস্টমারের, যাত্রীর সঙ্গে কন্ডাকটরের, হেলপারের- মোটকথা ঝগড়াঝাটি চলতেই থাকে আর আমি শিখতেই থাকি। এগুলো যখন বাসায় এসে প্রয়োগ করি, আমি নিশ্চিতভাবে তোর ভাবির সঙ্গে জিতে যাই। চিন্তা কর, যদি জানজট না থাকে, যদি রাস্তায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করার সুযোগ না পাই, শেখার সুযোগ না পাই, তোর ভাবির সঙ্গে ঝগড়ায় জেতার কি আর কোনো রাস্তা থাকবে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর