সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফুটবলীয় জ্ঞান বনাম অজ্ঞান

ইকবাল খন্দকার

ফুটবলীয় জ্ঞান বনাম অজ্ঞান

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

কোথা থেকে যেন ছুটে এসে ছোট ভাই বলল, ‘বিশ্বকাপ শুরুর পর যে হারে দেশে ফুটবল বিশেষজ্ঞ তৈরি হয়েছে, তা দেখে আমরা চোখ বন্ধ করে বলতেই পারি, দেশে এখন কাকের চেয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞ বেশি।’ কিন্তু কথাটা ঠিক না বেঠিক তা যাচাই করা কঠিন। কারণ কাক আনুষ্ঠানিকভাবে এতে দ্বিমত করেছে বলে জানা নেই। তাই আমি ছোটভাইয়ের কথার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সহমত পোষণ না করলেও দ্বিমত করলাম না। এই তো সেদিন পাড়ার চা স্টলে বসে আছি। একজন বললেন, ‘জীবনে  শেখার কোনো শেষ নেই। সব জায়গা থেকেই শিখতে হয়। শিখতে শিখতে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলতে হয়। অভিজ্ঞ করে তুলতে হয়। এই যে ফুটবল বিশ্বকাপ, এই বিশ্বকাপ থেকেও কিন্তু অনেক কিছু শেখার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য,  শেখার সেই সুযোগটা রাখেনি। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, দুঃখজনকও বটে। হতাশাজনক তো বটেই।’ আমি বললাম, ‘সব ঠিক আছে। এখন আমাকে শুধু এটা বলেন, এই বিশ্বকাপ থেকে আপনার কী শেখার ছিল আর এখন কেন মনে হচ্ছে শেখার সুযোগ রাখেনি।’ লোকটা বললেন, ‘অন্যান্য বিশ্বকাপের সময় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছিলেন, একেকটা খেলোয়াড়ের চুল একেকটা ডিজাইনে কাটা ছিল। আর এবার প্রায় সব খেলোয়াড়ের চুল একই ডিজাইনে কাটা। মাথার দুই সাইড দিয়ে চাপানো, পেছন দিক দিয়ে চাপানো, সামনে লম্বা; এই হলো ডিজাইন। যদি সবাই এ ডিজাইনে চুল না কেটে একেকজন একেক ডিজাইনে চুল কাটত, তাহলে সেই কাটিং দেখে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারতাম না?’ আমার এবার কেন যেন সন্দেহ হলো। তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, আপনার পেশা কী?’ লোকটা এ বলে চায়ে চুমুক দিলেন, ‘আমার একটা সেলুন আছে। নিজস্ব। এসি অলা।’ আমার দূর-সম্পর্কের এক চাচা বললেন, ‘আমি মনে করি, ফুটবল খেলায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষ করে পোশাকে। যদি পরিবর্তন না আনে, তাহলে আমার আমলে যেই দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল, সেই দুর্ঘটনা আবারও ঘটার আশঙ্কা আছে।’ আমি জানতে চাইলাম তার আমলে কী ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল আর পোশাকে পরিবর্তন আনলে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। চাচা বললেন, ‘আমি মনে করি, ফুটবল খেলোয়াড়রা যেই ধরনের হাফপ্যান্ট পরে, তা নিরাপদ নয়। অবশ্যই এই হাফপ্যান্টে পরিবর্তন আনতে হবে। হয়তো এই হাফপ্যান্টে বেল্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। নইলে আমি যেই দুর্ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছিলাম, যে কোনো খেলোয়াড়ই সেই দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।’ আমি আবারও জানতে চাইলাম দুর্ঘটনা সম্পর্কে। চাচা বললেন, ‘ক্যামনে বলি। হালকা লজ্জা লাগে। তোমাদের মতো বয়সে রেগুলার ফুটবল খেলতাম তো! এক দিন খেলার সময় বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড় আমার হাফপ্যান্ট  ধরে মারল টান। তারপরের অবস্থা অত্যধিক করুণ।’ আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ‘আমার বউ ক্রিকেটের জটিল নিয়ম-কানুন তো বোঝেই না, ফুটবলের সহজ নিয়ম কানুনও বোঝে না। গতকাল সে বলে কী, প্রত্যেক টিমের ১০ খেলোয়াড়ই নাকি ইচ্ছে করলে ১১তম খেলোয়াড় অর্থাৎ গোলকিপারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তার ভাষ্যমতে, এতগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে বলটা হাত দিয়ে ধরার অধিকার কেবল গোলকিপারেরই আছে, অন্য কারও এই অধিকার নেই; এটা কোন কথা?’ আমার এক ভাবি বললেন, ‘আপনার চেনাজানা কেউ আছেন যিনি পত্রিকা, টেলিভিশনে কাজ করেন।’ আমি জানতে চাইলাম, হঠাৎ মিডিয়ার নজরে আসতে চাওয়ার কারণ কী? ভাবি বললেন, ‘কেন আবার? রাত একটায় খেলা শুরু হয়। শেষ হয় তিনটায়। ঘুমাতে ঘুমাতে বাজে চারটা। আপনার ভাই অফিসে যায় সকাল আটটায়। তার মানে সকাল সাতটার মধ্যে উঠে নাস্তা বানাতে হয়। যেহেতু ২-৩ ঘণ্টায় ভালো ঘুম হয়নি তাই ঘুম ঘুম চোখে যাই রুটি বানাতে। ফুটবল খেলায় গোল হলেও আমার রুটি কিন্তু ‘গোল’ হয় না। এ কদিনে বেশিরভাগ রুটির একেকটা হয়েছে একেক সাইজের। আপনার ভাই রুটি দেখে বলেছেন, আর্জেন্টিনা ছাড়া বিশ্বকাপে খেলতে আসা সব দলের মানচিত্রের নকশায় রুটি নাকি বানিয়ে ফেলেছি। এ খবর জানাজানি হলে আমাকে নিয়ে নাকি টিভি, পত্রিকায় নিউজ হবে। অতি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যাব।’ টিভি, পত্রিকায় পরিচিত লোক আছে কি না তা চেপে গিয়ে বললাম, ‘এত রুটি বানালেন। এত মানচিত্র হয়ে গেল। কিন্তু আর্জেন্টিনার মানচিত্র হলো না কেন?’ ভাবি বললেন, ‘এই সহজ বিষয়টা বুঝলেন না? আমি তো আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। রুটি বানানোর সময় আর্জেন্টিনার কথা মনে পড়লেই মেসির কথা মনে পড়ে যায়। আর মেসি মানেই গোল। তখন রুটিও হয়ে যায় গোল।’

সর্বশেষ খবর