শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের দুই যুগপূর্তি

বাসুদেব আচার্য

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের দুই যুগপূর্তি

বাংলা উত্সবে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দ

জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু করেছিল ১৯৯২ সালে। সেই থেকে প্রতিবছর আমেরিকার মাটিতে আন্তর্জাতিক এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দুই যুগ পূর্তিতে এ বছর ২৪তম বইমেলাটি অনুষ্ঠিত হয় ২২ থেকে ২৪ মে। বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং ভারত থেকে আগত কবি-লেখক-সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তির মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, জামাল উদ্দীন হোসেন, বীরুপাক্ষ পাল, লুত্ফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, গীতালি হাসান, গোলাম মোর্তজা, হুমায়ুন কবীর ঢালী, অনামিকা ত্রিপুরা, ফরিদ আহমেদ, আহমেদ মাহমুদুল হক প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যোগ দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক রামকুমার মুখোপাধ্যায়। অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শামিম আহসান। ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কনস্যুলার আক্তার হোসেন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড কালচারাল কনস্যুলার তৌফিক হাসান। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত উত্সবটির নাম ছিল ‘প্রাণ বাংলাদেশ মেলা’। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি সংস্কৃতির এ মিলনমেলায় যোগ দিতে পিছিয়ে ছিল না পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনপদের মানুষও। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার নেতৃত্বে একটি পাহাড়ি সাংস্কৃতিক দল এ মিলনমেলায় যোগ দেয়। সে দলের একজন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে এ মহতী মিলনতীর্থে যোগ দেওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল।

এ অনুষ্ঠানে  মুক্তির গানের নির্মাতা লিয়ার লেভিনকে সম্মাননা প্রদান করেন বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামিম আহসান। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানকে নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ডু ক্যুমো বাংলা উত্সব সপ্তাহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বইমেলায় হাজার হাজার দর্শকের জমায়েত হয়। জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলায়তনের চারদিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করায় মনে হয়েছে বিদেশে একখণ্ড বাংলাদেশ। তেমনি উত্সবের শুরুতে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ রোড ৭৪ স্ট্রিট থেকে উত্সবের যে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয় তাতে বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগানে এলাকাটি মুখরিত হয়ে ওঠে। সেই শোভাযাত্রায় নিউইয়র্ক স্টেট ও মেয়রের বিশেষ দূত, ইমিগ্রেশন এফেয়ার্সের প্রতিনিধিও যোগ দেন। প্রাণ বাংলাদেশ মেলায় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা মাওলা ব্রাদার্স, সময় প্রকাশন, বাংলা প্রকাশ, সন্দেশ, গতিধারা, ধ্রুবপদ, পুঁথিনীলয়, নালন্দা ইত্যাদি, প্রীতম প্রকাশ, প্রথমা প্রকাশন, চন্দ্রাবতী পাবলিকেশন্স।

আমেরিকার মুক্তধারা নিউইয়র্ক, কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইসলামিক সেন্টার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিশ্বভারতীয় ও সাহিত্যম। বাংলাদেশ থেকে আসা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও মেলায় ছিল প্রাণ, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশি শাড়ি কাপড়ের স্টল। তিন দিনব্যাপী মিলনায়তনে একাধারে নাটক, সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, সেমিনার চলে ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। শিল্পী অনামিকা ত্রিপুরার পরিচালনায় বিভিন্ন পাহাড়ি শিল্পীর পরিবেশিত পাহাড়ি সংস্কৃতির নাচ ও গান এ অনুষ্ঠানকে অধিক মাত্রায় উপভোগ্য করে তুলেছিল। ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রদর্শনী, এটি উদ্বোধন করেন লিয়ার লেভিন। ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বৈধভাবে অর্থ প্রেরণ’-এর ওপর অনুষ্ঠিত হয় একটি সেমিনার। তাতে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ ও আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিবিদ বীরুপাক্ষ পাল, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ হোসেন, এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক ড. নূরন নবী, সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও আতাউর রহমান ছাড়াও ইউএনডিপিতে কর্মরত অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

আমেরিকায় বসবাসকারী অভিবাসী বাঙালিদের সঙ্গে বাংলাদেশ, কানাডা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাঙালিরাও এতে অংশগ্রহণ করেন। উত্সবের প্রথম দিনের র্যালিতে বাংলাদেশের লেখক, প্রকাশক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে অভিবাসী বাঙালিরাই কেবল অংশগ্রহণ করেননি, বাঙালিদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আমেরিকান নাগরিকও বাঙালির এই উত্সবে সম্পৃক্ত হন। মেলায় আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশ পাহাড়ি শিল্পী কেসিমংয়ের একক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের বাইরে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন করে আসছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। তারা বিদেশে বাংলা উত্সব ও বইমেলা ছাড়াও একুশের প্রথম প্রহরে জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছেন। আমেরিকায় বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী এই প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল হোক। মুক্তধারা নিউইয়র্ক বিদেশে বাংলা ভাষার প্রসারে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এই আমাদের প্রত্যাশা।

সর্বশেষ খবর