শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সমরেশ মজুমদার

একুল নেই ওকুল নেই

পর্ব - ১

একুল নেই ওকুল নেই

এক জীবনে কতগুলো জীবনযাপন করা সম্ভব? বেশির ভাগ মানুষ জবাব দেবে, দুই রকম। অবিবাহিত জীবন, যে জীবনে শৈশব থেকে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে চাকরি পেয়ে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত সময়টাকে ধরে নেওয়া যায়। দ্বিতীয়টা হলো, সংসার জীবন। যার মধ্যে বিয়ে থেকে শুরু করে সংসারীয় যাবতীয় কর্তব্য শেষ করে বার্ধক্যে এসে দীক্ষা নিয়ে অথবা না নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার সময়টাকে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত প্রথম জীবনের সঙ্গে দ্বিতীয় জীবনের ফারাক একটু একটু করে বিস্তর হয়ে পড়ে। মানুষ সেটা মেনেই নেয়। কমলের জীবনটাও ওই দুইভাবেই ভাগ হয়ে থাকত যদি ঘটনাটা না ঘটত। তার প্রথম জীবন কেটেছিল উত্তর কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে। মধ্যবিত্ত পাড়া, মোটামুটি সবাই সবাইকে চেনে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঠিকঠাক ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় সে জীবনটাকে একটু নড়বড়ে অবস্থায় দেখেছিল। কোনো ভালো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। হতাশা ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে, বাবা-মায়ের মুখে একটু একটু করে অন্ধকার জমছে। আর এই সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিনীরা এক এক করে বাপের বাড়ি ছেড়ে বরের বাড়িতে চলে গেল। সেই সময় মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে অনেক সুপাত্র আছে কিন্তু তাদের লাইনে দাঁড়াবার যোগ্যতা আমার নেই। সেই সময় কেমন করে যে ঘটনাটা ঘটে গেল তা আজও বুঝতে পারে না কমল। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে বক্স নম্বরে যে আবেদনপত্র পাঠিয়েছিল সেটা যে বাজে কাগজের ঝুড়িতে যাবে তাতে নিশ্চিত ছিল সে। কিন্তু তার বদলে কলকাতার একটা নামি জায়গায় লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তার কাছে আমন্ত্রণপত্র এলো। সেই আমন্ত্রণপত্রের কোথাও কোন কোম্পানির জন্য সে পরীক্ষা দেবে তা জানানো হয়নি। শুধু এজেন্সির কথাই উল্লেখ করা ছিল।

প্রশ্নের জবাবগুলো লিখতে অসুবিধে হয়নি তার। মোট এক শ কুড়িটা প্রশ্ন, উত্তর লেখার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল দুই ঘণ্টা। অর্থাৎ মিনিটে একটা প্রশ্নের উত্তর বড়জোর পাঁচ-ছটা শব্দে লিখতে হবে। কমল ঝটপট লিখে যাচ্ছিল। যেন দশ তলা বাড়ির সিঁড়ি দ্রুত টপকে ওপরে উঠে যাচ্ছিল। দশ মিনিট বাকি থাকতেই সে কাগজ জমা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। পরীক্ষা দেওয়ার আগে সে শুনেছিল, চাকরিটা খুব সাধারণ নয়।

তাই যখন দিল্লি থেকে চিঠি এলো তখন সে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদের জন্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে বাছাই করে চাকরি দিতে চাইছে।

কমলের সুবিধে হয়েছিল কারণ তাকে প্রশ্ন করেছিলেন একজন কালো আমেরিকান। কেটে কেটে প্রশ্নগুলো উচ্চারণ করেছিলেন যা বুঝতে তার একটুও অসুবিধে হয়নি। দিল্লি থেকে ফিরে আসার কুড়ি দিনের মধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে তার নিয়োগপত্র চলে এলো। ডলারের পরিমাণ টাকায় রূপান্তর করতে চোখ বড় হয়ে গেল কমলের।

কিন্তু ঠিক তখনই কমলের মায়ের হার্টের অসুখ ধরা পড়ল। বাবা মাকে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। কমলও সঙ্গী হয়েছে। ডাক্তার বললেন মাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিতে। কমলের তখন দিশাহারা অবস্থা। কোম্পানির চিঠিতে বলা হয়েছে খুব দেরি করা চলবে না। হাতে সময় মাত্র দশ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষা দেওয়ার পর এক সহপাঠীর উৎসাহে কমল পাসপোর্টের জন্য যে আবেদন করেছিল সেটা হাতে পেয়ে বাক্সে রেখে দিতে হয়েছিল। মনে হয়েছিল কিছু পয়সা আর পরিশ্রম বৃথাই করল। আজ সেটা বের করে কমল ভেবে পাচ্ছিল না সে কী করবে। মায়ের অবস্থা ভালো নয়। বাবা, বলতে গেলে চব্বিশ ঘণ্টাই নার্সিংহোমে বসে আছেন। দুই বেলা যাচ্ছে সে। মা ঘোরের মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থায় বাবাকে আমেরিকার চাকরিটার কথা কী করে বলবে সে। শেষ পর্যন্ত পাশের বাড়ির রাঙামাসির শরণাপন্ন হয়েছিল সে, সব শোনার আগেই রাঙামাসি মাথা নেড়ে বলেছিলেন, ‘তুই কী রে! এই সময় ওসব কথা ভাবতে পারছিস! জীবনে ভালো ভালো চাকরির সুযোগ তুই অনেকবার পাবি। কিন্তু মা চলে গেলে আর-।’ থেমে গিয়ে একটু সময় নিয়ে রাঙামাসি বলেছিলেন, ‘তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর বাবা।’

ভালোমন্দ কিছুই বুঝতে পারছিল না। মায়ের এ অবস্থায় বাবাকে একা রেখে যাওয়া যে অমানুষের কাজ হবে সেই বোধটা তীব্র হলো। কিন্তু তিন দিনের পর মাঝরাতে মা চলে গেলেন ডাক্তারদের চেষ্টা ব্যর্থ করে। চতুর্থ দিনটা তার শেষযাত্রার আয়োজন করতেই চলে গেল। কেবলই মনে হচ্ছিল আমার মনে যে বিদেশে যাওয়ার বাসনা ছোবল মেরেছিল তার শাস্তি দিতেই মা চলে গেল। আমি লস অ্যাঞ্জেলেসের ঠিকানায় চিঠি লিখে জানিয়ে দিলাম, যেহেতু আমার মা পরলোকগমন করেছেন তাই এখন আমার পক্ষে বাড়ি ছেড়ে বিদেশে যাওয়া সম্ভব নয়।

বাবা খুব ভেঙে পড়েছিলেন। মায়ের জন্য আমিও খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। মায়ের কাজের দিন কোম্পানির টেলিগ্রাম এলো, আপনার মাতৃবিয়োগের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ কারণে আপনি আরও পনেরো দিন পরে লস অ্যাঞ্জেলেস অফিসে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। কমলের বুকে নেতিয়ে থাকা ইচ্ছেটা ছটফটিয়ে উঠল।

বাড়িতে তখন বাবা আর সে, মহিলা বলতে অনেক দিন ধরে কাজ করা কাজের মাসি। বাবা ঝিমিয়ে পড়েছেন। ঘরের বাইরে যেতে চান না। বাজারে যেতে হয় কমলকেই। একদিন সে বাজার থেকে ফিরে এসে একটু অবাক হলো, বাবা তার ঘরে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু দেখছেন। তাকে দেখে বললেন, ‘তুমি যে আমেরিকায় চাকরি পেয়েছ সে কথা তো আমাকে বলনি। আমেরিকায় চাকরির জন্য যে তুমি আবেদন করেছিলে সে কথা আমাকে জানাতে কি সংকোচ করছিলে।’ কাগজটা টেবিলে রেখে বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বললেন, ‘যা ভালো লাগে তাই কর। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পেছনে তাকাবার দরকার নেই।’

বোঝাটা যদিও একটু হালকা হয়েছিল কিন্তু তাকে নামিয়ে দেওয়া সহজ ছিল না।

মা চলে যাওয়ার পর বাবার যা অবস্থা, তাতে তাকে একা রেখে আমেরিকায় চলে যাওয়া অত্যন্ত স্বার্থপরের কাজ হবে বলে বুঝতে পারছিল কমল। একটা পুরো দিন ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, বিদেশে চাকরি করতে যাবে না। কিছু করার নেই। দেশে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। কবে পাওয়া যাবে তার কোনো স্থিরতা নেই। চাকরি নেই, বেকার হয়ে বাড়িতে বসে থাকার কষ্ট মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সেদিনই রাঙামাসি তাকে ডেকে পাঠালেন, ‘কীরে, কী খবর তোর?’

ম্লান হাসি হাসল কমল, ‘আর খবর! বলুন, কী ব্যাপার!’

‘তোর আমেরিকায় যাওয়ার ব্যাপারটা কী হলো।’ রাঙামাসি জিজ্ঞাসা করলেন

‘আর আমেরিকা! মজা করছ কেন?’

‘ওই চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় কি পেরিয়ে গিয়েছে?’

‘না। এখনো হাতে সময় আছে। কিন্তু এসব কথা বলে কী লাভ!’

‘যদি সময় থাকে তাহলে যেতে হলে যা যা করতে হয় তা শুরু করে দে।’

‘কী বলছ তুমি!’ অবাক হয়ে তাকাল কমল।

‘তোর মাকে যখন রাখতে পারা গেল না তখন বাড়িতে বসে থেকে কী করবি। বিদেশে গিয়ে চাকরি করে চেষ্টা কর নিজের পায়ে দাঁড়াতে। হ্যাঁ, মনে রাখিস, তোর বাবা এখানে একা থাকবেন। তাই তো যত শিগগির পারিস ওঁকে তোর কাছে নিয়ে যাবি। শুনেছি, ও দেশে তো বয়স্কদের ভালোভাবে চিকিৎসা করা হয়।’ রাঙামাসি বললেন।

‘কিন্তু বাবাকে যাওয়ার কথা বলব কী করে।’

‘আমার সঙ্গে ওঁর কথা হয়েছে। যাওয়ার জোগাড় করতে যে টাকাপয়সা দরকার হবে তা চেয়ে নিতে বলেছেন।’ রাঙামাসি আশ্বস্ত করেছিলেন।

পরের সকালেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কমল। হাতে খুব কম সময়। এরই মধ্যে টিকিট, ভিসা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে ফেলতে হিমশিম খাচ্ছিল সে। কোম্পানি তাকে যে ট্রাভেল এজেন্টের ঠিকানা দিয়েছিল, চিঠি নিয়ে তাদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করতেই তারা সব ব্যবস্থা করে দিল। সমস্যা হয়েছিল ভিসার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। মায়ের পারলৌকিক কাজের সময় মাথা ন্যাড়া করতে হয়েছিল বলে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে তাকে মেলানো যাচ্ছিল না। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর আমেরিকান ভিসা অফিসাররা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

এজেন্টের কাছ থেকে টিকিট পেয়ে গেল কমল। কানাডা থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সটান লস অ্যাঞ্জেলেস।

কিন্তু হাতে টিকিট পাওয়ার পর কমলের অস্বস্তি বেড়ে গেল। এই চেনা কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হবে অচেনা আমেরিকায়। সেখানে তার পরিচিত কোনো মানুষ নেই। বাবা থাকবেন এখানে, একা।

আশ্চর্য ব্যাপার, ভিসা পাওয়ার দিন বাড়ি ফিরতেই বাইরের ঘরে বসে থাকা বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে কবে যাচ্ছ তুমি?’

সত্যি কথা বলা অনেক সময় বেশ কষ্টকর, তবু বলতে হলো, ‘আগামী তরশু।’

‘ও, গোছগাছ যা করার তা খেয়াল রেখে করে নাও। আর হ্যাঁ, যাওয়ার আগে সমস্ত বয়স্ক আত্মীয়র সঙ্গে দেখা করে যেও। লস অ্যাঞ্জেলেস বহু দূরের শহর। সেখান থেকে তো ইচ্ছে করলেই চলে আসতে পারবে না।’ বাবা মুখ ঘুরিয়ে বললেন।

আচমকা বুকের ভিতরটা খুব ভারী হয়ে গেল কমলের। মা চলে গেছেন, বাবাকে এ বাড়িতে ছেড়ে তাকেও চলে যেতে হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিল না সে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল।

আত্মীয় বলতে মোট পাঁচজন বয়স্ক বাস করেন এ শহরে। তাঁদের সঙ্গে এক দিনেই দেখা করে এলো কমল। প্রত্যেকের মুখে প্রায় একই কথা শুনতে হলো। মা চলে যাওয়ার পর বাবাকে একা রেখে চলে যাচ্ছ, এটা কি ঠিক হচ্ছে! যত তাড়াতাড়ি পার বাবাকে তোমার কাছে নিয়ে যেও। অথবা, তোমার তো আর কোনো ভাইবোন নেই। তোমার বাবাও একই ছেলে, তোমরা আমেরিকায় গেলে ওই বাড়িটাকে কত দিন তালাবদ্ধ করে রাখতে পারবে? দিনকাল যে রকম খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাতে সম্পত্তির পাহারায় না থাকলে ধরে রাখা খুব মুশকিল।

এসব কথার কোনো জবাব দিতে পারেনি কমল। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল বুকের ভিতরটায় শ্বাস ফেলার জায়গা যেন খুঁজে পাচ্ছিল না সে। অথচ কই কয়েকটা দিন যেমন যায়, তেমনি গড়িয়ে গেল। তারপর ট্যাক্সি ডেকে স্যুটকেস তাতে তুলে দরজায় দাঁড়ানো বাবাকে যখন প্রণাম করতে এলো তখন তিনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

কথা বলতে চাইলেও স্বর ফুটল না গলায়। পা ছুঁয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘ভালো থেকো।’

কথা বলা দূরের কথা, বাবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি সে। দ্রুত ট্যাক্সিতে উঠে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। এক নম্বর সিদ্ধান্ত, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পায়ের তলার মাটি শক্ত হলেই বাবাকে সে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিয়ে যাবে। বাবার আপত্তি না থাকলে এ বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া যাবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত তার পরিচিত অথবা আত্মীয়দের মধ্যে যেসব ছেলেমেয়ে আমেরিকায় চাকরি করতে বা পড়তে যেতে চাইবে তাদের সে সাহায্য করবে।

প্রায় ঘোরের মধ্যে সে কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর থেকে সোজা লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছে গেল। যাওয়ার আগে অফিসকে জানিয়েছিল বলে একজন লোক তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে এসেছিলেন। ভদ্রলোক ইউপির লোক। হিন্দিতে কথা বলছিলেন। বললেন, ‘আপনি তো এই প্রথমবার?’

‘হ্যাঁ। প্রথমবার আমেরিকায় এলাম।’

‘দেশ ছেড়ে যখন কেউ প্রথমবার এখানে আসে তার মুখ চোখের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। অবশ্য দুই দিনের জন্য, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’ ভদ্রলোক যেন খুব মজার কথা বললেন, এমন মুখের ভাব করলেন।

যে কোম্পানিতে কমল চাকরি পেয়েছিল তাদের শহরে একটি বড় গেস্টহাউসে দুটি ঘর নেওয়া আছে। তার একটিতে কমলকে তুলে দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, ‘পাশেই ইন্ডিয়ান হোটেল আছে, সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে নেবেন। আর হ্যাঁ, কাল সকাল ৭টায় তৈরি হয়ে থাকবেন, আমি অফিসে যাওয়ার পথে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে যাব। প্রথম দিন তো-!’ লোকটি চলে গেল।

ঘরটিতে থাকার ব্যবস্থা সাদাসাপটা। কমল শুনেছিল, ইংল্যান্ড-আমেরিকার টয়লেট বাথরুমে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। কোন বোতাম টিপলে জল বের হবে, কোনটায় আলো তা খুঁজে বের করতে ধন্দে পড়তে হয়। অথচ এই সিঙ্গেল রুমের ফ্ল্যাটের বাথরুমের যাবতীয় ব্যবস্থার সঙ্গে কলকাতার তো বটেই, মফস্বলের বাথরুমের কোনো তফাত নেই। দেখে স্বস্তি হলো।

খিদে পেয়েছিল। স্নানটান সেরে দরজা বন্ধ করে বাইরে পা বাড়াল কমল। এই বাড়ি এত চুপচাপ মনে হয় কোনো লোকজন এখানে বাস করে না। তার ঘর এক তলায়। ওপরে যাওয়ার লিফটের দরজা খানিকটা দূরে। কিন্তু সেখানে কোনো লোক দাঁড়িয়ে নেই। বাইরে এসে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে একটা চওড়া সুনসান রাস্তা দেখল সে, মাঝে মাঝে মাঝারি গতিতে গাড়ি চলে যাচ্ছে। ফুটপাথ জনশূন্য। এয়ারপোর্ট থেকে যে ভদ্রলোক তাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টটা ঠিক কোনখানে তা বলে যাননি। এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে সেই রেস্টুরেন্টের দেখা না পেয়ে কমল যখন একটা ল্যাম্পপোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে কী করবে ঠিক তখনই একজন তরুণীকে দেখতে পেল। তরুণীর সঙ্গে যে বৃদ্ধা হেঁটে আসছেন তিনি নিশ্চয়ই অসুস্থ। হাতে লাঠি, একটা চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা। মহিলার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তরুণীর হাত অন্য হাতে ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছেন।

কমল দেখল মহিলাদের পরনে রয়েছে শাড়ি যা বাঙালি মেয়েদের মতোই তারা পরেছেন। সে সাহসী হলো। ওঁরা পাশ দিয়ে যখন চলে যাচ্ছেন তখন হাত জোড় করে সে বলল, ‘নমস্কার।        [চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর