রবিঠাকুর বাংলাদেশে যত স্থানে পদচারণা করেছেন, তার মধ্যে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। জেলার কুমারখালি উপজেলার পদ্মার তীরে রবিঠাকুরের কুঠিবাড়িটি। বাগান ও পুকুরসহ প্রায় ১১ একর এলাকাজুড়ে এ কুঠিবাড়ি। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত এ শিলাইদহে কবিগুরু অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। জমিদারির দেখাশোনা করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৈশোরে এবং তার পরবর্তীকালেও মাঝে মাঝে এখানে আসতেন এবং এই কুঠিবাড়িতেই থাকতেন। তবে পরবর্তীকালে বন্যার সময় পদ্মার ভাঙনে পুরোনো কুঠিবাড়ির নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই পুরোনো কুঠিবাড়িটি ভেঙে ফেলা হয় এবং পুরোনো ভবন সামগ্রী দিয়েই নতুন কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে এক দশকেরও বেশি সময় রবীন্দ্রনাথ অনিয়মিত বিরতিতে এখানে অবস্থান করেছেন। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁর সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতা। ১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুঠিবাড়ির গুরুত্ব অনুধাবন করে কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরের নিচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র রবীন্দ্রনাথের ছবি। তা ছাড়া রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র। অন্যান্য ব্যবহার্যের মধ্যে আরও আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটি স্পিডবোট, পন্টুন, আট বেহারা পালকি, কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস। রবিঠাকুরের ব্যবহৃত পাতকুয়া ও চৌবাচ্চাও আছে।