বড় গল্প
[গত সংখ্যার পর]
কয়েক দিন দোনোমনো করার পর সে মিজানের পক্ষে চলে গেল। বছর দুয়েক স্বামীকে ছেড়ে থাকার কষ্ট সে করবে। তার পর থেকে তো সারা জীবনের সুখ। ইতালি, ইতালি।
মিজান তখন শেষ অস্ত্রটি ব্যবহার করল। আয়নাকে সে ভালোবেসে ‘জান’ বলে ডাকে। এক মধ্য রাতে মিজান তার জানকে আদরে সোহাগে ভাসিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘‘তুমি কি আমার জন্য একটা কাজ করবা, জান?’’
আবেগ গদগদ কণ্ঠে আয়না বলল, ‘‘তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। কী করতে হইব কও?’’
‘‘নানিরে ধর। তারে ধরলেই কাম হইয়া যাইব।’’
‘‘পনেরো লাখ টেকা নানি পাইব কই? দশ-বিশ হাজার হইলে সে ব্যবস্থা করতে পারব।’’
‘‘আছে, ব্যবস্থা আছে।’’
ব্যবস্থাটা মিজান বলে দিল। মাঠে সতেরো শতাংশ জমি আছে মতিবিবির। ওই জমি কিনতে খুবই আগ্রহী তার ভাই। শতাংশের দাম হবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা। সেখান থেকে ধার হিসেবে মিজানকে পনেরো লাখ দেবে। ইতালিতে গিয়ে বছর-দেড়েকের মধ্যে টাকাটা সে শোধ করে দেবে।
কথা শেষ করে দুই হাতে আয়নাকে জড়িয়ে ধরল মিজান। ‘‘আমার এই কাজটা তুমি কইরা দেও, জান। কাইলই বাড়িত যাও। নানিরে পটাও।’’
অন্ধকার ঘরে স্বামীর আদরে ভেসে যেতে যেতে ইতালির স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেল আয়না। পর দিন সেই স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি এলো। প্রথমেই মতিবিবিকে কথাটা সে বলল না। ধরল তার মাকে। রাবেয়া মনোযোগ দিয়ে মেয়ের কথা শুনল। চিন্তিত স্বরে বলল, ‘‘তোর নানি রাজি হইব না।’’
তখন স্বামীর কথার বাইরে গিয়ে মাকে লোভনীয় একটা প্রস্তাব দিয়ে বসল আয়না। ‘‘তোমার জামাই কইছে পনেরো লাখ টেকায় সে ফিরত দিব তিরিশ লাখ। ডবল। তুমি নানির লগে কথা কও। বাবার লগে কও, জরিবুর লগে কও। এতে আমগো বেবাকতেরই ভালো হইব। ইতালি গিয়া আমিও কাম করুম। লাখ লাখ টেকা রুজি করুম। তোমগো জামাই তো পনেরো লাখে তিরিশ লাখ দিবই। আমার রুজির টেকা থিকা মাসে কমপক্ষে পঞ্চাশ-ষাইট হাজার টেকা আমিও পাঠাইতে পারুম। তোমরা রাজার হালে থাকবা।’’
তিন-চার দিনের মধ্যে কথাটা মতিবিবির কানে তুলল রাবেয়া। মতিবিবি জীবন পার করেছেন ঢাকায়। ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে দালালরা কীভাবে প্রতারিত করছে গ্রামের সরল সোজা মানুষদের, সেসব তার জানা। পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে কীভাবে সমুদ্রে ডুবে মারা যাচ্ছে মানুষ, টেলিভিশনের খবরে প্রায়ই এসব শোনা যায়। রাবেয়ার কথা শুনে মুহূর্তেই ব্যাপারটা সে নাকচ করে দিল।
ঘটনা এখানেই শেষ হলো না। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে গেল আয়নার পক্ষে। এক দিন কথা তুলল বশির। তারও ব্যাপক উৎসাহ ইতালির ব্যাপারে। জরি এসে দিন সাতেক থেকে একই প্যাঁচাল পেড়ে গেল। ময়না পর্যন্ত বোনের পক্ষ হয়ে নানিকে পটায়। রাবেয়ার ভ্যাকর ভ্যাকর তো আছেই। আর আয়না কথায় কথায় কাঁদছে। ইনিয়ে বিনিয়ে বিলাপ করছে। বাড়িটা নরকে পরিণত হয়ে গেল দিন পনেরোর মধ্যে। পুরো পরিবার একদিকে আর মতিবিবি একদিকে। শালিক ছাড়া কেউ তার সঙ্গে কথাই বলে না।
বশিরের সঙ্গে পরামর্শ করে রাবেয়া তখন অন্য একটা পথ বের করেছে। ল্যাংড়া-খোঁড়া, কানা ট্যারাদের শয়তানি বুদ্ধির আকাল থাকে না। ল্যাংড়া বশির তার বউকে একটা শয়তানি বুদ্ধি দিল। সে জানে রাবেয়ার মামা আর মামাতো ভাইয়েরা মতিবিবির জমিটুকু কিনতে চায়। রাবেয়া গোপনে গিয়ে মামাকে ধরল। শেষ পর্যন্ত বড় ভাইয়ের ঘরে ডাক পড়ল মতিবিবির। সন্ধ্যাবেলা পরিবারের সবাই আছে বাড়িতে। কথাটা তুলল ভাই। রাবেয়ার মুখে শোনা পনেরো লাখের তিরিশ লাখ হওয়া, আয়না চলে যাওয়ার পর মাসে-মাসে পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা পাঠানো ইত্যাদি ইত্যাদি বলে মতিবিবিকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা চালাল। তার পরও রাজি মতিবিবি হলো না। থম ধরে থাকল কয়েক দিন। একসময় ভাবল, ঠিক আছে, যদি তার শেষ সম্বলের বিনিময়ে মেয়ে আর নাতনিরা সুখী হয়, হোক।
এক লাখ দশ হাজার টাকা শতাংশ হিসেবে বড় ভাইয়ের কাছে জমি বিক্রি করে দিল মতিবিবি। মিজানকে দেওয়া হলো পনেরো লাখ। বাকি টাকা চলে গেল রাবেয়ার হাতে। ওই টাকা দিয়ে চায়ের দোকানের সঙ্গে মনোহারি দোকান করল বশির। বাড়ির লোকের চেহারা রাতারাতি ঘুরে গেল। তারা এখন ভালো জামাকাপড় পরে। ঘরে ফ্রিজ টেলিভিশন এসেছে। সব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল মতিবিবি। তার মুখে কথা নেই।
চার.
বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বইছে। মতিবিবির মনও ভালো। টাকাটা কাজে লেগেছে। মিজান নিরাপদে ইতালিতে পৌঁছেছে। এখন আছে মিলান শহরে। দু-চার দিন পর চলে যাবে ভেনিসে। সেখানে বন্ধুর দোকানে কাজ করবে।
মিজান চলে যাওয়ার পর থেকে এই বাড়িতেই থাকছে আয়না। স্বামী ইতালিতে পৌঁছে গেছে জানার পর থেকে তার আর মাটিতে পা পড়ছে না। যেন হাওয়ায় ভাসছে। যখন-তখন খিলখিল করে হাসছে। মা-বোনদের সঙ্গে হাসি আনন্দ করছে। মতিবিবিকে এসে জড়িয়ে ধরছে প্রায়ই। নানা রকমের ঠাট্টা মশকরা করছে নানির সঙ্গে। মিজান একটা দামি ফোন কিনে দিয়ে গেছে। ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের সময় মিলিয়ে তার সঙ্গে কথা বলছে আয়না। বাড়িতে আয়নার কদর খুবই বেড়ে গেছে।
আয়নার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফোনটা ময়নাকে দিয়ে দিয়েছে মতিবিবি। দেখে শালিক বলেছিল, ‘‘কাজটা ভালো হইল না নানি। কয় দিন বাদে দেখবা সাইজাবুও মাইজাবুর পথ ধরছে।’’
হলোও তাই। মাস দেড়েকের মাথায় জানা গেল গৌধূলিয়া গ্রামেরই মতিউরের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে ময়নার। মতিউর মৃধাবাড়ির ছেলে। অবস্থাপন্ন। তিন বোনের এক ভাই। বোনদের বিয়ে হয়েছে ভালো ঘরে। মতিউরের বাবা নজরুল মৃধা বিস্তর জমির মালিক। বাড়িতে বড় বড় ঘর। তিনখানা ধানের গোলা। দশ-বারোজন বাঁধা কামলা। ধানবিক্রির টাকায় রাজার জীবন। তবে সংসারে শান্তি নেই। কারণ একমাত্র ছেলেটি মাদকাসক্ত। ‘‘ইয়াবাখোর’’। ইয়াবার টাকা জোগাড়ের জন্য মা-বাবার জান খেয়ে ফেলে। বোনদের সংসারে গিয়ে হানা দেয়।
এই ছেলের সঙ্গে ময়নার সম্পর্ক?
বাড়ির কেউ কোনো কথা বলল না। জ্বলে উঠল মতিবিবি। মাদকাসক্ত ছেলে ভয়ংকর। সে প্রেম পিরিতি, সংসার বউ-পোলাপান কিছুই বুঝবে না। থাকবে মাদক নিয়ে। বাচ্চাকাচ্চা হলেও সেগুলো হবে প্রতিবন্ধী।
জমি বিক্রির পর থেকে মেয়ের সংসারের কোনো কিছু নিয়েই কথা বলত না মতিবিবি। চুপচাপ থাকত। মতিউরের সঙ্গে ময়নার সম্পর্কের কথা শোনার পর আর চুপ থাকতে পারল না। আশ্চর্য ব্যাপার, এবারও দেখা গেল বাড়ির সবাই এক পক্ষ আর মতিবিবি এক পক্ষ। রাবেয়া জরি আয়না এমনকি বশির পর্যন্ত ময়নার পক্ষে। তাদের কথা হচ্ছে, ময়না খুবই বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে ঠিকই মতিউরকে মাদক থেকে ফেরাতে পারবে। সবচাইতে বড় কথা, মৃধাবাড়ির একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিয়ে হবে চায়ের দোকানদার ল্যাংড়া বশিরের মেয়ের, এ তো ভাবাই যায় না!
মতিবিবি অনড়। সে কিছুতেই মাদকাসক্ত ছেলের সঙ্গে নাতনির বিয়ে দেবে না।
এই নিয়ে এক দিন তুলকালাম হয়ে গেল। বিকেলবেলাই বশির বাড়ি ফিরে এসেছে। মেয়ে কোলে জরি এসেছে তার স্বামীকে নিয়ে। দুপুর থেকেই কানাঘুষা চলছিল বাড়িতে। অন্য সবার গলা খাদে থাকলেও আয়নার গলা চড়া। মতিবিবিকে শুনিয়ে শুনিয়ে সে বলছিল, ‘‘আমগো ভালো ঘরে বিয়া হোক বুড়িমাগি এইটা চায় না।’’ তার সঙ্গে গলা মিলাল জরি। সে বলল অন্য কথা। ‘মা, বুড়িরে এই বাড়িতে থাকতে দিতাছ ক্যান? বাইর কইরা দেও না ক্যান? সংসারে অশান্তি লাগাইতাছে।’
ময়না চুপচাপ। তার কথা বলার দরকার কী? তার কাজ তো অন্যরাই করে দিচ্ছে! শুধু শালিক মেয়েটারই নানির জন্য কষ্ট হয়। তার কথা বলার ক্ষমতা নেই। সে চুপচাপ এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
বশির বাড়ি আসার পর ঘটল আসল ঘটনা। মতিবিবি বসেছিল লম্বা ঘরটায়। সেখান থেকে শুনতে পেল আয়না উঁচু গলায় বলছে, ‘‘মারে দিয়া কাম হইব না বাবা। ব্যবস্থা তুমি কর। আগে বুড়িরে বাড়ি থিকা খেদাও। তার বাদে মৃধাসাবের লগে কথা কইয়া ময়নার বিয়া ঠিক কর। বুড়িরে আমগো আর দরকার নাই।’’
বশির বলল, ‘‘এই বাড়িও তো তর নানিরই। বাইর কইরা দিলে, চেয়ারম্যানের কাছে যদি বিচার দেয়?’’
এবার গলা খুলল রাবেয়া। ‘বিচার দিয়া লাভ হইব না। বাড়ির দখল আমার। মামায়ও আমার পক্ষে। মায় করতে পারব না কিছুই।’
জরির মেয়েটা ট্যা ট্যা করে কাঁদছিল। স্বামীটা স্ত্রৈণ। মেয়েকে স্বামীর কোলে দিয়ে জরি বলল, ‘‘আমি তোমগ একটা বুদ্ধি দেই। বুড়ির খাওনদাওন বন্ধ কইরা দেও। দুই তিন দিন খাইতে না পাইলে নিজে থিকাই ঢাকায় চইলা যাইব। আপদ বিদায়।’’
বড়মেয়ের কথায় সায় দিল বশির। আয়না উচ্ছ্বসিত। রাবেয়া আর ময়না চুপচাপ। শালিক দিশাহারা।
ওদিকে লম্বা ঘরের এক কোণে বসে সবই শুনতে পেয়েছে মতিবিবি। প্রতিটি কথা তার বুকে বল্লমের মতো বিঁধেছে। নিঃশব্দে কাঁদছিল সে। চোখের জলে গাল ভেসে যাচ্ছিল। জীবনে এই তা হলে সে পেল? যে মেয়ের জন্য, যে নাতনিদের জন্য হাড় পানি করল, তাদের আজ এই চেহারা? সব শুষে নিয়ে আজ তাকে ছুড়ে ফেলে দিল? রাগ নয়, গভীর অভিমান বুকে চেপে বসল মতিবিবির। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। রাবেয়ার ঘরে টেলিভিশন চলছে। বাড়ি ফেরার সময় তিন কেজি গোরুর গোস্ত নিয়ে এসেছে বশির। রাবেয়া গোরুর গোস্ত রাঁধতে বসেছে। বাড়ি ম ম করছে মশলার গন্ধে। আনন্দ উৎসবের কমতি নেই। শুধু যে মানুষটার জন্য এই অবস্থা সংসারের, সেই মানুষটা আজ কোথাও নেই। সে হয়ে গেছে খড়কুটোর মতো তুচ্ছ!
এক ফাঁকে লুুকিয়ে লুকিয়ে নানির কাছে এসেছিল শালিক। মতিবিবি পাথরের মতো বসে আছে। শালিক এসে ফিসফিস করে বলল, ‘‘চিন্তা কইরো না নানি। বেবাকতে ঘুমাইয়া পড়লে আমি তোমার লেইগা ভাত আর গোরুর গোস্ত লইয়া আমু নে। তোমারে আমি না খাইয়া থাকতে দিমু না।’’
মতিবিবি একটিও কথা বলল না। একবারও তাকিয়ে দেখল না শালিকের দিকে। যেমন বসেছিল, বসে রইল। যেন সে কোনও মানুষ নয়, যেন সে কোনও পুরোনো গাছ।
রাত-দুপুরে ঘর থেকে বেরোল মতিবিবি। বাড়িটি নিঝুম হয়ে আছে। কোথাও কেউ জেগে নেই। কার্তিকের মরা চাঁদ আকাশে। হাওয়ায় শীতভাব। শাড়ির ওপর পুরোনো চাদরটা জড়িয়েছে মতিবিবি। ধীরপায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। মাঠের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কোথায় কোন দিকে যাচ্ছে, জানে না! পা যে দিকে টানছে, সে দিকেই চলেছে। চুয়াত্তর বছরের ভারী শরীর টেনে নিতে আজ যেন কষ্টই হচ্ছে না। রাতে খাওয়া হয়নি। শালিক বলেছিল লুকিয়ে খাবার দিয়ে যাবে। বোধহয় সুযোগ পায়নি। অবশ্য দিলেও সেই ভাত মুখে তুলত না মতিবিবি। মেয়ে নাতনিদের সংসার মন থেকে মুছে গেছে।
হাঁটতে হাঁটতে মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যায় মতিবিবি।
ভোরবেলা দেখে সে এক নদীতীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিশাল চওড়া নদী। মতিবিবি চিনতে পারে। ‘সন্ধ্যানদী’। সে নদীতীরে বসে পড়ে। এ দিকটা নির্জন। বসতি নেই। শুধু গাছপালা ঝোপঝাড় আর বালিয়াড়ি। হাওয়া বইছে হু হু করে।
নদীর দিকে তাকিয়ে বসে রইল মতিবিবি। পুব আকাশে সূর্য উঠল খানিক পর। সূর্যের প্রথম আলোয় মনোরম হয়ে উঠল নদী-জল। মাছ ধরার নৌকো, ট্রলার, ছোট বড় নানা রকমের নৌযান চলছে নদীপথে। চোখের সামনেই সবকিছু। তবু কিছুই যেন দেখতে পায় না মতিবিবি। সে বসে থাকে। সময় বয়ে যায় সন্ধ্যানদীর মতো। দুপুর হয় বিকেল। বিকেল হয় সন্ধ্যা। রাত। মধ্যরাত। আবার ভোর। মতিবিবি বসেই থাকে। পিছনে গৌধূলিয়া গ্রাম, সামনে সন্ধ্যানদী। দুইয়ের মাঝখানে মতিবিবি। নদীর পাড় ঘেঁষে ডিঙিনৌকো বেয়ে যায় এক উদাস মাঝি। গলা খুলে গান গায়। ‘‘আমি অপার হয়ে বসে আছি, ও হে দয়াময়। পারে লয়ে যাও আমায়।’’
মতিবিবি বসেই থাকে। দিন যায়, রাত যায়।
চতুর্থ রাতের শেষ প্রহরে নদীর আকাশে হঠাৎ করেই অপূর্ব এক চাঁদ হেসে উঠল। বিশাল সন্ধ্যানদীর কোথাও কোনও নৌযান নেই। কিচ্ছু নেই। চাঁদের আলোয় ঝিলমিল ঝিলমিল করছে নদী-জল। মতিবিবির দৃষ্টি ছিল ঘোলা। সেই দৃষ্টি পরিষ্কার হয়ে গেল। সে দেখে, নদী পেরিয়ে ধীরে এগোচ্ছে এক নৌকো। হালে বসে আছে ধপধপে পোশাকের মাঝি। মাথায় পাগড়ি। মুখে লম্বা দাড়ি। সব সাদা। চাঁদের আলো টর্চলাইটের মতো পড়েছে তার মুখে। সেই আলোয় মানুষটি হয়ে উঠেছে অলৌকিক।
নৌকো ধীরে এগোয়। মতিবিবি তাকিয়ে থাকে নৌকোর দিকে। হালে বসা মানুষটির দিকে। তার পর, আশ্চর্য এক ঘুমে জড়িয়ে আসে তার চোখ। যেখানে বসেছিল সেখানেই শুয়ে পড়ে সে। এক অনন্ত ঘুমে ডুবে যেতে যেতে শোনে সেই গানের একটুখানি। ‘‘পারে লয়ে যাও আমায়...’’!
পিঁপড়েরা খবর পায় সবার আগে। চারদিককার ঝোপঝাড় থেকে, মাটির গর্ত থেকে বেরিয়ে সার ধরে মতিবিবির দিকে এগোতে লাগল তারা। খানিক পর আসবে মাছিরা।