শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র পার্লামেন্টে বাংলাদেশি শেখ রহমান ও আবুল খান

যুক্তরাষ্ট্র পার্লামেন্টে বাংলাদেশি শেখ রহমান ও আবুল খান
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিউহ্যাম্পশায়ার এবং জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে জয়ী হয়েছেন দুই বাংলাদেশি।
নিউহ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের মেম্বার (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) হিসেবে পুনরায় জয়ী হলেন বাংলাদেশি-আমেরিকান আবুল খান। রিপাবলিকান পার্টি ডিস্ট্রিক্ট-টুয়েন্টি থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য ‘স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ’ হলেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সন্তান আবুল খান।

 

৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিউহ্যাম্পশায়ার এবং জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে জয়ী হয়েছেন দুই বাংলাদেশি।

নিউহ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের মেম্বার (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) হিসেবে পুনরায় জয়ী হলেন বাংলাদেশি-আমেরিকান আবুল খান। রিপাবলিকান পার্টি ডিস্ট্রিক্ট-টুয়েন্টি থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য ‘স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ’ হলেন বরিশালের ভাণ্ডারিয়ার সন্তান আবুল খান। উল্লেখ্য, আবুল খানই একমাত্র রিপাবলিকান যিনি মার্কিন প্রশাসনে উচ্চ পর্যায়ের নির্বাচিত বাংলাদেশি। আবুল খান সবার দোয়া চেয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে ওঠার জন্য। ‘একই সঙ্গে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর’ বলেও উল্লেখ করলেন বিজয় সমাবেশ থেকে। আবুল খানকে এনডোর্স করেছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন। এর আগে তাকে আরও কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ‘কম্যুনিটি হিরো’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে ‘কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন’। জীবনের টানা ৪০ বছর প্রবাস জীবনে থেকে ২০০৬ সালে কয়েকদফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ভোটে জিতে আসছেন। তিনি নিউহ্যাম্পশায়ারের সি ব্র“কে স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তিনি সেখানে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা, জননিরাপত্তা ও পরিবেশ উন্নয়নে একজন বাংলাদেশি হিসেবে বিশেষ অবদান  রেখে চলেছেন। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী খান লজ বাড়ির প্রয়াত মাহাবুব উদ্দিন খান কাঞ্চন ও প্রয়াত শাহানারা বেগমের বড় ছেলে আবুল বাশার।

প্রয়াত বাবা মাহাবুব উদ্দিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সচিব ছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তারা দুই ভাই দুই বোন। পরিবারের সবাই আমেরিকা প্রবাসী। তবে ছোট বোন রোজী খান অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী। ভাই ও বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। আবুল খান ১৯৮১ সালের ১০ জানুয়ারি আমেরিকায় যান । এর আগে ঢাকার মুসলিম গভ. হাইস্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৭৮ সালে নটর ডেম কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে তিন বছর পড়ার পড় স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা গিয়ে আর ফেরেননি। আমেরিকা বসবাসরত অবস্থায় ১৯৮৪ সালে নিজ জেলা পিরোজপুরের মরজিয়া হুদা খানকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির ঘরে ছেলে আতিক খান ও মেয়ে নূসরাত জাহানও আমেরিকা প্রবাসী। আবুল খান আমেরিকা যাওয়ার পর নিউইয়র্ক শহরে প্রথমে ব্যবসা শুরু করেন। ২০০০ সালে তিনি নিউহ্যাম্পশায়ার সিটিতে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া সেখানে একটি গ্যাস স্টেশনও ছিল। ২০০৬ সালে তিনি সি ব্র“কে প্লানিং বোর্ডের সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচনে দাঁড়ান । চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে সেই তার প্রথম নির্বাচনে জেতা। এরপর ২০০৬ সালে ওই শহরের বাজেট কমিটির সদস্য পদে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে সি ব্র“ক বোর্ড অব সিলেক্টম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তৃতীয় দফায় নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ২০১১ সালে সি ব্র“কে তিন বছরমেয়াদে ওই পদে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হয়ে নিউকিয়ার পাওয়ার প্লান্টসহ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউহ্যাম্পশায়ারে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

অপরদিকে, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেট সদস্য হলেন বাংলাদেশি শেখ রহমান। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-ফাইভ থেকে লড়ছিলেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছেন। উল্লেখ্য, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে এই প্রথম নির্বাচিত হলেন কোনো বাংলাদেশি আমেরিকান। কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ রহমানকে সর্বাত্তকভাবে সমর্থন দেয় ‘এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান-আমেরিকান লেবার’ তথা আসাল। আসালের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন আটলান্টা থেকে এ সংবাদদাতাকে জানান, রিপাবলিকানদের রাজ্য জর্জিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের এই বিজয়ের অভিযাত্রায় অংশ নিতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিতবোধ করছি।

উল্লেখ্য, শেখ রহমান হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসে কোনো বাংলাদেশি লড়েননি। শেখ রহমানকেও বাংলাদেশ প্রতিদিন সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দেয়। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের শেখ রহমান ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। নিজেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার বিজয়ের পেছনে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের বিপুল সমর্থন ছাড়াও তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকার কৃষ্ণকায় ও হিস্পানিক ভোটারদের পূর্ণ সমর্থন লাভ করেন। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘আওয়ার রেভল্যুশন’ কর্তৃক তিনি অনুমোদিত হয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিও তাকে পূর্ণ সমর্থন দেয়।

সর্বশেষ খবর