প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা শহরে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক সংবাদ সম্মেলনে তার সরকারের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে বলেন, এই অভিযান দ্রুতগতিতে পরিচালিত হবে এবং এর লক্ষ্য হলো গাজাকে হামাসের হাত থেকে মুক্ত করা। তিনি দাবি করেন, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরাই একমাত্র অনাহারে আছে। তিনি গাজার সাধারণ মানুষকে ইসরায়েল অনাহারে রেখেছে এমন অভিযোগও অস্বীকার করেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে। ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়ার মতো দেশগুলোও এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই অভিযান জিম্মিদের মুক্তির জন্য কোনো কাজে আসবে না, বরং তাদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজার মানুষের ওপর এই 'সামষ্টিক শাস্তি' অগ্রহণযোগ্য। অন্যদিকে, রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, এটি যুদ্ধের বেপরোয়া তীব্রতা বাড়াবে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বলেন, যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে তা গাজায় আরও একটি বিপর্যয় ডেকে আনবে, যা পুরো অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা রমেশ রাজাসিংহাম বলেন, গাজার খাদ্য সংকট এখন আর আসন্ন নয়, এটি এখন খাঁটি ও নির্ভেজাল অনাহার।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া অবশ্য ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই বৈঠক সেই প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে। তিনি আরও বলেন, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিলেই যুদ্ধ আজই শেষ হতে পারে। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।
নেতানিয়াহু তার সংবাদ সম্মেলনে গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য একটি তিন ধাপের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, সাহায্য বিতরণের জন্য নিরাপদ করিডোর তৈরি করা। ইসরায়েলি বাহিনী এবং অন্যান্য অংশীদারদের মাধ্যমে আরও বেশি আকাশ থেকে সাহায্য ফেলা। বিতর্কিত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল-সমর্থিত গাজান হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো।
এদিকে, হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক সরকারের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপ জিম্মিদের জীবন বিপন্ন করবে। নেতানিয়াহু জিম্মিদের বিষয়ে বলেছেন, যদি আমরা কিছু না করি, তবে আমরা তাদের বের করতে পারব না।
নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করে বলেন, তারা হামাসের প্রচারণার শিকার হয়েছে। গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের কিছু ছবিকে তিনি ভুয়া বলেও অভিহিত করেন। যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে নেতানিয়াহু জানান, বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য সামরিক বাহিনীকে দুই দিনের জন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার থেকে গাজায় অনাহারে ও অপুষ্টিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, এতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৭। এছাড়া, ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে মোট ৬১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল