শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরিবের ডাক্তার মজিবুর

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর থেকে

গরিবের ডাক্তার মজিবুর

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের মজিবুর রহমানের নিজ উদ্যাগে গড়ে তোলা পল্লী জাগরণী মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র নিভৃত পল্লীর দুস্থ মা ও শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশা জাগিয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে গর্ভবতী ও শিশুদের এ কেন্দ্র বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে। মজিবুর রহমান নিজেই এ কেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মা ও শিশুর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য গড়ে তোলেন এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। সোনাপাতিল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘বারণই’ নদীর কোলঘেঁষে ছোট একটা মাটির কুঁড়েঘরে চলছে চিকিৎসাসেবা। এ মাটির চেম্বার ছাড়াও রাস্তাঘাটে অসুস্থ রোগী দেখলেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। পাঁচ দশক ধরে বিনামূল্যে এ কাজ করে যাচ্ছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ডা. মজিবুর রহমান। ১৯৬৭-৬৮ সালে মাধবপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে গুটিবসন্তে মানুষের মৃত্যু দেখে পণ করেন, মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। সেই ব্রত নিয়ে রাজশাহীতে রেডক্রস, ইপিআই-এর প্রশিক্ষণও নেন। সেই থেকে গত ৫০ বছর ধরে চলছে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পতিরাম শরণার্থী শিবির ও যুদ্ধশিবিরে রেডক্রসের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এলাকায় তিনি গরিবের ডাক্তার বলেই পরিচিত। তার কাছে গিয়ে বিনা পয়সায় সেবা পেয়ে খুশি দরিদ্র মানুষ।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজীপুর এলাকার গৃহবধূ রোজিনা খাতুন জানান, মজিবুর ডাক্তার গরিবের বন্ধু। গরিবকে খুব ভালোবাসে। আমি গর্ভবতী থাকা অবস্থা থেকে দুটি সন্তানের জন্ম হওয়া পর্যন্ত তার কাছেই বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছি। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের গৃহবধূ মালা বেগম বলেন, ডা. মজিবুর রহমান বিনা পয়সায় খুব যত্নসহকারে চিকিৎসা করেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক গর্ভবতী ও প্রসূতি মা মজিবুর রহমানের চেম্বারে আসেন চিকিৎসাসেবা নিতে।  সমস্যার কথা শুনে সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন তিনি। নাটোরের বাসুদেবপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক রাজিব সরকার বলেন, ডা. মো. মজিবুর রহমান একজন আদর্শ মানুষ। মানুষের সেবার জন্য ঘর-সংসার করেননি তিনি। চিরকুমার এ মানুষটি গরিব ও দুস্থ মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

মজিবুর রহমান তার গ্রামের দরিদ্র মানুষকে সবসময় তার সাধ্যমতো বিনা পয়সায় চিকিৎসা এবং ওষুধ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া প্রতি বছর একবার তিনি সহস্রাধিক দরিদ্র ব্যক্তিকে ওষুধসহ ব্যবস্থাপত্র দেন। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাটোরে নলডাঙ্গা, রাজশাহীর পুঠিয়া ও দুর্গাপুর এবং নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে কয়েকশ মা ও শিশু সেবা নিতে ভিড় করে গরিবের ডাক্তারের মাটির চেম্বারে। এ ঘরে দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরটির দেওয়ালে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় সেটা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় গরিবের ডাক্তার মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানবসেবার ব্রত নিয়ে চলছে তার চিকিৎসা কার্যক্রম। ব্যক্তিগত কোনো প্রত্যাশা নেই। চিকিৎসাটা প্রথমত হলো সেবা। তারপরে ওষুধ। চিকিৎসাসেবার কোনো বিনিময় হয় না বলে তিনি মনে করেন। সেবা করতে গিয়ে মজিবুর নিজের সুখ-শান্তির কথা ভাবেননি। ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। এলাকাবাসী জানান, গরিবের ডাক্তারের জরাজীর্ণ চেম্বারটি সংস্কার এবং নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দফতরে আবেদন-নিবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। চেম্বারটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি জানান, তিনি যেখানে চিকিৎসা সেবা দেন স্থানটি জরাজীর্ণ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি গরিবের ডাক্তারের চেম্বারটা সংস্কার করে ব্যবহারে উপযোগী করার। নাটোরেরর নলডাঙ্গার মজিবুর রহমানের মতো সারা দেশে গরিবের ডাক্তারের সংখ্যা বাড়–ক। মানুষের পাশে দঁাঁড়াক মানুষ এমন প্রত্যাশা সবার।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর