রংপুর নগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রাম। এখানে এক সময় ছেলেদের খেলাধুলাই ছিল স্বপ্ন। সেখানে মেয়েরা ফুটবলে দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বেশ কয়েকবার। বর্তমানে পালিচড়ার ছয়জন নারী ফুটবলার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ক্রীড়া পরিদফতর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে সারা দেশে ৪০ জন মহিলা খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। রংপুর বিভাগের ১০ ফুটবলার এতে সুযোগ পান। এখান থেকে সেরা ১১ জন মহিলা খেলোয়াড়কে পর্তুগাল পাঠানো হবে উন্নতর প্রশিক্ষণের জন্য। গত ১৭ জানুয়ারি থেকে তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে বিকেএসপিতে। এর মধ্যে পালিচড়ার নাছরিন আক্তার, মৌরাশি, রেখা আক্তার, শীলা আক্তার, শাম্মি আক্তার, ইন্নিমা রয়েছেন। জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই গ্রামের মেয়েরা। গোল্ডেন বুটসহ সেরা খেলোয়াড় হয়েছে শামীমা আক্তার নাসরিন ও ফাতেমা আক্তার জয়নব। রংপুরের গোটা দলটাই উঠে আসে পালিচড়া গ্রাম থেকে। বর্তমানে সেখানে নারী ফুটবলার আছেন ২৭ জন। এই গ্রামেরই সিরাত জাহান ও ইশরাত জাহান খেলছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলে। এরই মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের হয়ে এখানকার ১১ ফুটবলার হংকং, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে খেলে এসেছে। তারা হলো রুনা, রুমী, সুলতানা, স্বপ্না, রুনা আক্তার, মৌসুমী (ক্যাপ্টেন), বৃষ্টি, লাবণী, আশা, জয়নব ও নাসরিন। ২০২০ সালে জাতীয় দলের হয়ে পালিচড়া গ্রামের রেখা, রুমি, রুনা, ময়ূরী, শাম্মী, শাপলাসহ বেশ কয়েকজন ইন্দোনেশিয়ায় খেলে এসেছে। মেয়েদের উৎসাহ দিতে গ্রামে গড়ে উঠেছে সদ্যপুষ্করণী উন্নয়ন সংস্থা ও নারী ফুটবলার তৈরির জন্য সদ্যপুষ্করণী যুব স্পোর্টিং ক্লাব, যেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে উৎসাহী আরও কিছু নারী ফুটবলার। সিরাত জাহান, মিশরাত জাহানদের পথ ধরে পালিচড়া হয়ে উঠেছে রীতিমতো নারী ফুটবলারদের এক গ্রাম। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা প্রাথমিক স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সাফল্য আনে পালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেবার জাতীয় পর্যায়ে রানার্স-আপ হয় পালিচড়ার এই মেয়েরা। এরপর থেকেই শুরু হয় এগিয়ে যাওয়ার পালা। ফুটবলকন্যাদের পালিচড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের এক কোণে পাশাপাশি দুটি স্কুল। একটি পালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি পালিচড়া এম এন উচ্চ বিদ্যালয়। রাস্তার পাশে বিশাল মাঠ, সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে মেয়েদের জন্য স্টেডিয়াম। মাঠের পশ্চিম কোনায় রয়েছে সদ্যপুষ্করণী উন্নয়ন সংস্থা ও সদ্যপুষ্করণী যুব স্পোর্টিং ক্লাব (এখান থেকে বাংলাদেশ নারী লীগেও অংশগ্রহণ করা হয়)। ক্লাবের সভাপতি কাম কোচ মিলন খানের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। এএফসির ‘বি’ লাইসেন্সধারী কোচ মিলন মিয়া সকাল-বিকাল খুদে ফুটবলারদের নিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন। কোচ মিলন খান জানান, ২০১২ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৪ সালে রানার্সআপ, ২০১৫ সালে ব্র্যাক কিশোরী ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও কেএফসি জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠে এই দলটি। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও জিতেছিল ফেয়ার প্লে ট্রফি। ২০১৬ সালে কেএফসি সিনিয়র ন্যাশনাল উইমেন চ্যাম্পিয়নশিপে তারা অর্জন করে তৃতীয় স্থান। ২০১৭ সালে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টে তারা রানার্স-আপ, ২০১৮ সালে ৪৭তম গ্রীষ্মকালীন ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৯ সালে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, ২০২০ সালে রানার্সআপ। ২০২১ সালে ক্রীড়া পরিদফতরের বিচ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২১-২২ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে রংপুর বিভাগীয় দলের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পালিচড়ার মেয়েরা।