শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নরসুন্দর প্রদীপের সেলুনে জ্ঞানভান্ডার

সেলুনের কাজ শেষ করে অবসরে বই পড়তেন নরসুন্দর প্রদীপ প্রোজ্জ্বল। নিজে সেলুন দেওয়ার পর দোকানের মধ্যেই শুরু করেছেন লাইব্রেরি।

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

নরসুন্দর প্রদীপের সেলুনে জ্ঞানভান্ডার

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার আতুরার দোকান এলাকায় অবস্থিত ‘অদ্বৈত হেয়ার ড্রেসার’। বাইরে থেকে সাজসজ্জায় এটাকে সাধারণ সেলুন মনে হলেও ভিতরে প্রবেশ করলে ভাঙবে সে ভুল। সেলুনে প্রবেশের পর মনে হবে কোনো শৌখিন মানুষের নিজের হাতে সাজানো লাইব্রেরি। যাতে নানা বয়সী মানুষ হরেক রকম বই পড়ে জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। সেলুনের মধ্যে এমন লাইব্রেরি তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নরসুন্দর প্রদীপ প্রোজ্জ্বল। শুধু লাইব্রেরি করে তিনি থেমে থাকেননি, এসএসসির গন্ডি পেরোতে না পারা এ যুবক করছেন লেখালেখিও। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার ৯টি গ্রন্থ। প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েকটি গ্রন্থ।

২০১০ সালে চকবাজার এলাকায় ‘অদ্বৈত হেয়ার ড্রেসার’ সেলুন দেন। ওই সেলুনকেই তিনি  রূপান্তর করেন লাইব্রেরি হিসেবে। বর্তমানে সেখানে কাব্যগ্রন্থ, গবেষণা, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন ধরনের কয়েক শ বই রয়েছে।

সেলুন কাম লাইব্রেরি নিয়ে প্রদীপ প্রোজ্জ্বল বলেন, ‘আর্থিক অনটনের কারণে নিজে লেখাপড়ায় বেশি দূর এগোতে পারিনি। এটা নিয়ে ব্যথিত হতাম। তাই চেষ্টা করেছি নিজে নিজে জ্ঞান অর্জন করার। সেলুনের কাজ শেষ করে অবসরে বই পড়তাম। ছোটকাল থেকেই বই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। নিজে সেলুন দেওয়ার পর বেশকিছু বই নিয়ে দোকানের মধ্যেই লাইব্রেরি করি। বর্তমানে লাইব্রেরিতে ৩৫০টির বেশি বই রয়েছে। এখানে সব বয়সের লোক আসে বই পড়তে।’ তিনি বলেন, ‘আমি উচ্চশিক্ষত নই। আবার অঢেল সম্পদের মালিকও নই। তাই কোনো একটা কাজ দিয়ে নিজেকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এ প্রচেষ্টার অংশই হচ্ছে লেখালেখি। আমি বিশ্বাস করি লেখালেখি আমাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঁচিয়ে রাখবে। এরই মধ্যে ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েকটি।’ জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার মালুমঘাট ডোমখালীর বাসিন্দা প্রদীপ প্রোজ্জ্বল। জীবিকার তাগিদে বর্তমানে বসবাস করছেন চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকায়। লেখাপড়ার হাতেখড়ি নিজ এলাকা চকরিয়ায়। জীবিকার তাগিদে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় মেজো মামা ভানু চন্দ্র শীলের সেলুনে কাজ শুরু করেন। আর্থিক অনটনের কারণে এসএসসিতে এসে থমকে যায় তার লেখাপড়া। ২০০২ সালে নরসুন্দর হিসেবে পেশা পুরোদমে শুরু করেন। কিন্তু নিজের জ্ঞান তৃষ্ণা মেটাতে কাব্যগ্রন্থসহ নানা ধরনের বই পড়তে থাকেন। ২০১০ সালে চকবাজার এলাকায় ‘অদ্বৈত হেয়ার ড্রেসার’ সেলুন দেন। ওই সেলুনকেই তিনি রূপান্তর করেন লাইব্রেরি হিসেবে। বর্তমানে তার লাইব্রেরিতে কাব্যগ্রন্থ, গবেষণা, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন ধরনের কয়েক শ বই রয়েছে। সেলুনে চুল কাটতে আসা লোকজনের পাশাপাশি আশপাশের জ্ঞানপিপাসুরাও আসেন প্রদীপের লাইব্রেরিতে বই পড়ে তৃষ্ণা মেটাতে। তার সংসারে আছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। সংসার-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন লেখালেখিতে। তার ৯টি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর